ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

যশোরে ২২ দিনে ১০ শিশুর মৃত্যু, ব্যাপক নিউমোনিয়ার আশঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪
যশোরে ২২ দিনে ১০ শিশুর মৃত্যু, ব্যাপক নিউমোনিয়ার আশঙ্কা ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: যশোর জেনারেল হাসপাতালে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এ পর্যন্ত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিউমোনিয়া বা ঠাণ্ডাজনিত রোগে এসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


 
শিশু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় যশোর হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকারা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ জন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
 
সোমবার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, এ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৫০জন শিশু। কিন্তু শিশু ওয়ার্ডটি ২৮ শয্যার হওয়ায় ২২টি শিশুকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। কিছু শিশু চিকিৎসাসেবা নিয়ে যেমন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিদিনই ৬০ থেকে ৮০ জন নতুন শিশু ভর্তি হচ্ছে।

অতিরিক্ত শিশু রোগীদের মেঝেতে আশ্রয় মিললেও তা নিয়ে ক্ষোভ নেই স্বজনদের। তারা জানান, মেঝেতে থাকলেও তাদের সমস্যা হচ্ছে না। ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পেলেই তারা সন্তুষ্ট।

যশোর সদর উপজেলার রাজারহাট এলাকার শামীম উদ্দিন জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন। কয়েকদিন হলো ৬ মাস বয়সী মেয়েটি শ্বাসকষ্টে ভুগছে। খবর পেয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেই সোমবার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
 
মনিরামপুর থেকে আসা মান্দার দাস জানান, তার পাঁচ মাস বয়সী মেয়েকে দুই দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে মেয়েটি।

দেড় মাস বয়সী ছেলে সন্তানের জননী পুষ্প রাণী জানান, ১৫ দিন ধরে ছেলেটি ঠাণ্ডা ও জ্বরে ভুগছে। তাই হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন। চিকিৎসা চলছে। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি সে।

শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সেবিকা শাহনাজ খানম মিল্কী জানান, সেপ্টেম্বর মাসের ২২ দিনে শিশু ওয়ার্ডে ১ হাজার ৫২৪ শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

প্রতিদিন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু বাড়ছে। সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তবে দুই দিন হরতালের কারণে রোগীর চাপ তুলনামূলক কম বলেও তিনি জানান।
 
হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতার হিসেব অনুযায়ী, গত ২২ দিনে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে- ৭ জনের বয়স দেড় মাস থেকে ১১ বছর পর্যন্ত। এরা হলো সাব্বির হোসেন (৬ মাস), রিফা (৯ মাস), রফিকুল (দেড়মাস), হাসি (৪৩ দিন), আজিম (৪ মাস), আকাশ (১১ বছর), লামিয়া (৮ মাস)। বাকি তিনটি শিশু নবজাতক। তাদের মা হলেন- পিয়া, মঞ্জু ও নূর জাহান।

এছাড়া, হাসপাতালে ২২ দিনে ভর্তি শিশুর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫২৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩ সেপ্টেম্বর ৮৯ জন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, কখনো ঠাণ্ডা, কখনো গরম- এ রকম আবহাওয়ায় শিশুরা নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ায় শিশুরোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
 
জেনারেল হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২ মাস থেকে ২ বছর বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
 
এ জাতীয় রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ঠাণ্ডায় শিশুদের গায়ে গরম কাপড় পরিয়ে দিতে হবে। আবার গরমে শরীর ঘামলে কাপড় খুলে মুছে দিতে হবে। একই সঙ্গে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে যশোর সরকারি এমএম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসে এখন বৃষ্টিপাত কমে গেছে। এ কারণে তাপমাত্রা উঠানামা করছে। বাৎসরিক গড় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ভিত্তিতে যশোর বাংলাদেশের শুষ্কতম অঞ্চল। এ অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় উত্তাপ বাড়ছে। আবহাওয়া গত কারণে এই সময়ে রোগব্যাধিও বেশি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।