‘ট্রাম্প ট্যারিফ’ বা উচ্চ শুল্কনীতির প্রভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টানা দুই মাস—আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে গেছে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানিতে ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেপ্টেম্বর শেষে তিন মাসের গড় প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশে। তিন মাসে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় ছিল ৯ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মাসভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৮৯, ৭ দশমিক ২০ ও ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।
তুলনায় দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকলেও পরের দুই মাসে বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে।
তবে উদ্যোক্তা নেতারা বলছেন, রপ্তানিতে এই সাময়িক পতনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, বরং এটি একটি বাজার নির্দেশক সংকেত।
নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়া আমাদের জন্য খারাপ সংবাদ, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা খুব স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত ছয় মাস ধরে অনিশ্চয়তা চলছে, আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও মন্দা ভাব রয়েছে। আমার ধারণা, এই দুটি বাজারের দুর্বল অবস্থার কারণেই আমাদের রপ্তানি আয় মন্থর হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই আমরা এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারব।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও চীন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শুল্কের মুখে পড়েছে। এখন তারা ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি বাড়াতে পারে। এতে যেমন প্রতিযোগিতা বাড়বে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগও তৈরি হবে।
ফজলুল হক আরও যোগ করেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নামা ব্যবসার স্বাভাবিক ওঠানামার অংশ। এমন পরিস্থিতি সাময়িক, এক-দুই মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীন ও ভারতের তৈরি পোশাকে শুল্ক বেড়েছে। তারা এখন ইউরোপে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ফলে ওই বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, বিক্রি কমেছে, ফলে নতুন কার্যাদেশও আসছে না।
তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ে ট্যারিফ কার্যকর হওয়ার আগে ক্রেতারা আগেভাগে পণ্য সংগ্রহ করেছিল, ফলে ওই মাসে রপ্তানি বেড়েছিল। আগস্ট থেকে বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ায় রপ্তানি কমেছে।
রুবেল মনে করেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট পর্ব চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কার্যাদেশ আবার বাড়বে এবং তখন বাংলাদেশ সেই সুবিধা পাবে।
ব্যবসায়ী নেতারা আরও জানান, এ সময়টি তৈরি পোশাকের মন্দা মৌসুম। আগামী এক-দুই মাস পর রপ্তানি আয় আবার বাড়বে বলে তারা আশাবাদী।
জেডএ/এসআরএস