চট্টগ্রাম: জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, জুলাই যোদ্ধারা দেশের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা জাতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তাদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়তে হলে জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়স্থ (বিআইএ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একটি ইনসাফভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জুলাই আন্দোলন ছিল এক ঐতিহাসিক গৌরবগাঁথা, যা গণমানুষের অধিকার আদায়ের একটি অনন্য মাইলফলক। সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধারা আজও দেশের গণতন্ত্র, ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা আমাদের চলমান সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই যোদ্ধারা দেশের ক্রান্তিকালে জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই চেতনা ও প্রেরণা দেশের সব মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে ইনসাফভিত্তিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুসের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, মহানগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খায়রুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি মাইমুনুল ইসলাম মামুন, ছাত্রনেতা সিফগাতুল্লাহ, মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন আল মামুন, আবরার হাসান রিয়াদ প্রমুখ।
মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবকে টেকসই করতে জুলাই যোদ্ধাদের আবারো মাঠে নামতে হবে, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। ৫৬℅ কোটায় নিয়োগের অযৌক্তিক পদ্ধতি চালু করেছিল স্বৈরাচারী সরকার। কোটা বিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও ত্যাগ তিতিক্ষা বাংলাদেশে অধিকার আদায়ের মাইলফলক। আদালতকে কাজে লাগিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার বিতর্কিত সেই কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের অপচেষ্টা চালায়।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক নির্বাচন, ভোটারবিহীন ও নিশিরাতের নির্বাচনের পর ডামি-আমি নির্বাচন করে ফ্যাসিবাদ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। জনগণের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বাধছে দিন দিন। ইতিহাসের মহান নায়ক জুলাই যোদ্ধারা জাতিকে মুক্তির দিশা দেখিয়েছিল সেদিন। কোটাবিরোধী ধুমায়িত ক্ষোভ থেকে শুরু হয়েছিল ছাত্রদের শান্তিপ্রিয় গণপ্রতিরোধ। কোটা বিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা রক্তাক্ত হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের একদফায় রূপ নেয়। গণঅসন্তোষ পরিণত হয় ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণবিস্ফোরণে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভুত্থানের সময় ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা চালিয়েছিল নিষ্ঠুর দমনপীড়ন ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ। আওয়ামী সরকার, এর অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী- পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর একাংশ আর ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংও এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। অবশেষে বিপ্লব সফল হয় ৩৬ জুলাই। বৈষম্যহীন সমাজ কায়েমের সে লক্ষ্য অর্জনের পথে নানান ষড়যন্ত্র আর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা। জুলাই যোদ্ধাদের আবারো মাঠে নামতে হবে এ বিপ্লবকে টেকসই করতে, এর কোন বিকল্প নেই। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, নগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ছাত্রনেতা আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
বিই/পিডি/টিসি