ঢাকা, সোমবার, ৪ কার্তিক ১৪৩২, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

‘শাপলা প্রতীক না দিলে ইসি পালানোর জায়গা পাবে না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৯, অক্টোবর ১৯, ২০২৫
‘শাপলা প্রতীক না দিলে ইসি পালানোর জায়গা পাবে না’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক না দিলে ইলেকশন কমিশন বাংলাদেশ থেকে পালানোর জায়গা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।

তিনি বলেন, আমরা যে প্রতীক চাইছি, সেই প্রতীক তারা (ইলেকশন কমিশন) আমাদের দেবে না।

কিন্তু তারা নাকি আমাদের ওপর একটি প্রতীক চাপিয়ে দেবে। এ ধরনের নজিরবিহীন এবং ন্যক্কারজনক কথা যেই কমিশন বলতে পারে, আমরা মনে করি, এ কমিশনের পক্ষে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়।

রোববার (১৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক ঐক্যজোট ,আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির অবস্থান ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তুষার বলেন, এ নির্বাচন কমিশনকে আমরা হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যদি বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন চান, তাহলে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে এ ধরনের অন্যায় আচরণ বন্ধ করুন। আপনারা যে আচরণ করছেন, তা থেকে মনে হচ্ছে, আগামীতে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার পথে সবচেয়ে বড় বাধা এ নির্বাচন কমিশন। তারা চায় না দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনে আসুক। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এই জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অদৃশ্য শক্তির পরামর্শ অনুযায়ী তাদের দ্বারা আশ্বস্ত হয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। এ বিচার আপনাদের কাছে তুলে দিলাম।

তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে আমরা সবসময় শিক্ষকদের যেকোনো ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম এবং আছি। শহীদ মিনারে যখন শিক্ষকরা এসেছিলেন অনশনে, তাদের ওপর পুলিশ যেভাবে হামলা চালিয়েছে, আমরা তখনও তাদের পাশে ছিলাম এবং আজও আছি। এখানে এসে আপনাদের দাবি আদায় করতে হচ্ছে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কোনো ব্যাপার আমাদের সামনে নেই।

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের যে দাবি তা ন্যায্য, এটিতে এ সরকারের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ এ সরকার আমাদের সবার সমর্থনে গঠিত হয়েছে, এবং এ সরকারে আমরা যাদের বসিয়েছি তারা আপনার দাবির প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা দেখতে পেয়েছি, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তারা আমাদের আপামর শিক্ষক সমাজের প্রতি যথেষ্ট যত্ন এবং যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না। তাদের উচিত ছিল, শিক্ষকরা আন্দোলনে আসার আগে বাংলাদেশে কোন কোন শিক্ষক সমাজের কী ধরনের সমস্যা আছে তা নিয়ে শিক্ষক সমাজের নেতৃবৃন্দদের ডেকে বলা যে, ‘আপনাদের জন্য আমরা কি করতে পারি’। কিন্তু আজকে আপনাদেরকে এখানে আসতে হচ্ছে, অনশনে বসতে হচ্ছে, এবং আপনারা যেটা ন্যায্য দাবি করেছেন, সে দাবি নিয়ে দিনরাত এখানে বসে থেকে সরকারের কাছে বলতে হচ্ছে যে, আমাদের দাবি পূরণ করে দিন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে থাকতে চান, যদি সম্মানের সঙ্গে থাকতে চান, তাহলে নির্বাচনের আগে, ক্ষমতা ছাড়ার আগে, তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের শিক্ষকদের যত ন্যায্য দাবি আছে, যেগুলো আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা মেনে তারপরই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। যদি তা না করেন, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেন, তাহলে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ আপনাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। এবং বলবে আমরা আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের জন্য কি করেছেন? আমাদের শিক্ষকদের জন্য কি করেছেন? আমাদের প্রাইমারি শিক্ষকদের জন্য কি করেছেন? আমাদের মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য কি করেছেন?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, এই সরকার আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষকদের যে সকল দাবি তুলেছে, সেই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে দেখতে পাচ্ছি, ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি, তিনি লন্ডনে গিয়ে সেজদা দিয়ে আসলেও আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষকদের আজ ভোরবেলা, সকালবেলা বা দুপুরবেলা, খিদে-তৃষ্ণা সহ্য করতে করতে এই তপ্ত রোদে বসে তাদের দাবির জন্য নানা ধরনের দাবি তুলতে হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমরা আপনাকে শ্রদ্ধা করি, আমরা আপনাকে ভালোবাসি, এবং আপনার যে কোনও বিপদে আমরা পাশে আছি। কিন্তু পরিষ্কারভাবে আপনাকে বলতে চাই, আমাদের শিক্ষকদের, আমাদের শ্রমিকদের, আমাদের ছাত্রদের এবং আমাদের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের যে সকল ন্যায্য দাবি আছে, সেগুলো পূরণ না করে লন্ডনে গিয়ে আপনার সেফ এক্সিট নিশ্চিত করলে বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। আপনার সেফ এক্সিট একমাত্র বাংলাদেশের জনগণের কাছে নিশ্চিত, সুতরাং রাজনৈতিক দলের কাছে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা তাদের কাছে আমাদের ন্যায্য দাবিকে তুলে দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আপনাকে এই শিক্ষক, যারা এখানে বসে আছেন, তাদের দাবিগুলো মানতে হবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, একটি বিচারও আপনাদের কাছে দিতে চাই। আপনারা দেখেছেন, আপনারা যত ন্যায্য দাবি তুলছেন, তা মানা হচ্ছে না। আমাদের একটি অত্যন্ত ন্যায্য দাবি আছে। এ নির্বাচন কমিশন এবং এ সরকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়, তারা আমাদের এ অত্যন্ত ন্যায্য দাবি মানছে না। আমরা বলেছিলাম, আমাদেরকে শাপলা প্রতীক দিতে হবে। কেন আমরা এ প্রতীক চেয়েছি? এ প্রতীক বাংলাদেশের মানুষের অন্তরের মধ্যে রয়েছে। শাপলা ফুল বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার প্রতীক। প্রতিদিন নির্বাচন কমিশন বলছে, এ প্রতীক আমাদের দেওয়া যাবে না। কেন দেওয়া যাবে না? এ প্রশ্নে তারা আমাদের কোনো যৌক্তিক বা আইনি ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।

এ সময় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার এক থেকে দেড়শো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

ডিএইচবি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।