জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অর্থবহ করতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, ১৫ বছরে দেশকে একটি জেলখানায় পরিণত করা হয়েছিল।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দলের করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে তারা একথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ডা. এসএম সরওয়ার বলেন, জাতীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সংশোধন ও বিয়োজনের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনের দাবি অনিবার্য। দেশ ও জাতি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরী বলেন, পুরাতন ব্যর্থদের দিয়ে দেশ চালাতে ক্ষমতায় বসালে নতুন দেশ গঠন করা সম্ভব নয়। নতুন দেশ গঠন করতে নতুন মানুষ দরকার।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যারা দেশ পরিচালনা করেছে তারা কেউ চাঁদাবাজি, দুর্নীতিমুক্তভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারেনি। এখন সুযোগ এসেছে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে নতুন আদর্শবাদী দলকে ক্ষমতায় আনা।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সহ-সভাপতি ও মতুয়া গণজাগরণ মঞ্চের সভাপতি নিউটন অধিকারী বলেন, একটি পরিবর্তনের আশা নিয়ে দেশে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন এসেছিল। যশোরে হিন্দুদের চব্বিশটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, রংপুরে ২১টি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন হিন্দু নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, হিন্দু-বৌদ্ধ সবার সম্পদ লুটের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের অপরাধ আগে হয়েছে, এখনো বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে, শ্বশুরের সামনে ছেলের বউকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ন্যায়বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। যেন চোরকে তাড়িয়ে ডাকাতকে এনেছি। আমরা এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন না হলে ২৪-এর তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছিল সেই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে আরেক জুলাই তৈরি হবে।
আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার বিএম এরশাদ বলেন, চব্বিশের আড়ালে একাত্তরের চেতনাকে অস্বীকার করা যাবে না। ২৪ এবং ৭১ একই চেতনার দুটি নাম। দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে গিয়েই মূলত ৭১ এবং ৩৬ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান হয়েছে। আমরা সত্যিকার অর্থে একটি নতুন বাংলাদেশ চাই—যে বাংলাদেশ সবার কথা বলবে, সবার অধিকার রক্ষা করবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। এই মর্মে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকতে হবে এবং যে কোনো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ জরুরি।
সংলাপে গণআজাদী লীগের সভাপতি আতাউল্লাহ খান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মুখপাত্র মো. সফিকুল ইসলাম, ন্যাপের (ভাসানী) চেয়ারম্যান মোস্তাক ভাসানী, স্বাধীন বাংলা ছাত্র পরিষদের অন্যতম নেতা মোজাম্মেল হক মজলিশ, মেজর (অব.) আনিসুর রহমান শিকদারসহ ২০টির বেশি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
জেডএ/এইচএ/