ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৭ বছর পর মামলা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৭ বছর পর মামলা! মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহফুজার রহমান ইলিয়াস

রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইনুর রহমান মুক্তারকে সাত বছর আগে পুলিশ আটক করে। পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

হত্যার পরও ভয়ে এতদিন বিচারের জন্য থানা বা আদালতে মামলা করতে পারেননি মুক্তারের পরিবারের সদস্যরা। কারণ পুলিশই উল্টো মুক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তাই দীর্ঘ সাত বছর পর স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন তার স্ত্রী।

মুক্তারের স্ত্রী মর্জিনা রহমানের দাবি, ওই সময়কার পুলিশ কর্মকর্তারা এখন রাজশাহী থেকে চলে গেছেন। তাই সাহস করে বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার আবেদন করেন তিনি।

মামলায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের বোয়ালিয়া থানার সেই সময়কার উপ-পরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম, ঘটনাকালীন সময়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর হোসেন খন্দকার, সেই সময়ের রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক আশিকুর রহমান, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন ছাড়াও এই মামলায়  আরো চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিএনপি নেতা আইনুর রহমান মুক্তারকে রাজশাহীর উপশহর ১ নম্বর সেক্টরের জুঁই ডেকোরেটরের (বাবুলের দোকান) কাছ থেকে পুলিশ সদস্যরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হাতকড়া পরিয়ে তাদের জিম্মায় নেন। এরপর উপরোক্ত পুলিশ সদস্যরা অমানবিকভাবে নির্যাতন করেন। তাকে গুরুতর আহত করা হয়। এতে মুক্তারের মৃত্যু হয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একই তারিখে গুরুতর আহত অবস্থায় আইনুর রহমানকে মুক্তারকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ গুরুতর জখম ও মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পাঠায়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনা সবাই জানেন।

মৃত্যর পর মুক্তারের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের দেখতে না দিয়ে আসামিরা সিটি করপোরেশনের গোরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যান। এ কথা শুনে স্ত্রী মর্জিনা ও এলাকার মানুষ সেখানে যান। পরে মর্জিনা স্বামীর মরদেহ থেকে কাফন সরালে শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম দেখতে পান। উপস্থিত সবাই এসব দেখেন এবং তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে সেই সময় বলাবলি করেন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মাহফুজার রহমান ইলিয়াস বলেন, ঘটনার সেই সময়ে প্রকাশিত সংবাদ, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও বিবরণে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মুক্তারকে পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফজতে এমন হত্যাকাণ্ডের এত বছর পর মামলার ঘটনা বিরল। আর যেই বিশেষ আইনে মামলা করা হয়েছিল সেই আইনটি ২০১৩ সালের হলেও নতুন। কারণ এই আইনের প্র্যাক্টিস নেই।

আইনজীবী আরও বলেন, বিশেষ একটি আইনের ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়েছেন। এখন আইন পর্যালোচনা করে মামলার আবেদন গ্রহণ বা খারিজের ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

বিষয়টি বিবেচনা করে আদালত ভালোভাবে মামলাটি আমলে নেবেন এবং হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাদী পক্ষের এই আইনজীবী।

মামলা করার সময়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপর সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবলু প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।