ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আদালতকে ধর্ষণের ঘটনা বর্ণনা করলেন ভুক্তভোগী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২২
আদালতকে ধর্ষণের ঘটনা বর্ণনা করলেন ভুক্তভোগী

টাঙ্গাইল : কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) তিনি টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরেন।

তার বয়ান জবানবন্দী হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রুমি খাতুন।

সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দী শেষ হয়। পরে আদালত সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হন সাংবাদিকরা।

ওই নারী আদালতকে জানান, ছয় ডাকাত তাকে ধর্ষণ করে। তাকে গলাটিপে ধরে মারধরও করে ডাকাতরা। আরও এক নারীও এ সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী।

জবানবন্দীতে যা উঠে এলো-
গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কুষ্টিয়ার প্রাগপুর থেকে ২৫-৩০ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহনের বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত সাড়ে ১১টায়  বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। খাওয়া-দাওয়া করে বাসটি রওনা হলে এর পাঁচ মিনিট পর ২০-২২ বছরের তিন যুবক সেটিতে চড়েন। তারা জানান, সামনে তাদের আরও লোক আছে।

কিছুদূর যাওয়ার পর আরও চার যুবক বাসে ওঠেন। তাদের মধ্যে একজন জানান, সামনে আরও লোক তাদের অপেক্ষা করছেন। পরে আরও ছয়জনসহ মোট ১৩ জন বাসটিতে চড়েন।

বাসে ওঠার পর তারা পেছনের দিকে গিয়ে বসেন। পরে তাদের মধ্যে থেকে একজন ভুক্তভোগীর পাশে বসতে চান। কিন্তু সুপারভাইজার তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেন। পরে ওই যুবক পাশের একটি সিটে গিয়ে বসেন। এর পর তিনি সিগারেট ধরান। সিগারেটের ধোঁয়া ভুক্তভোগীর ওপর ছড়ালে তিনি বারণ করেন। এ সময় সেই যুবক গালাগাল করতে থাকেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর তিনজন চালকের পাশে বনেটে গিয়ে বসেন। তারা সামনে নেমে যাবেন বলে জানান। এক পর্যায়ে চালককে উঠিয়ে তাদের মধ্যে থেকে একজন বাস চালাতে শুরু করেন। তারা বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে পিছনে নিয়ে আসেন।

এরপর প্রথমে পুরুষ যাত্রীদের পরে নারী যাত্রীদের হাত, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলেন। এ সময় তারা যার কাছে যা পান (মুঠোফোন, গহনা, টাকা) লুট করে নেন। সবাইকে মারধর করেন। পরে ভুক্তভোগীর কাছে এসে তার গলা চেপে ধরেন। এক পর্যায়ে তাকে পালা করে ছয় ডাকাতই ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় ধস্তাধস্তির মধ্যে ভুক্তভোগীর হাত ও চোখের বাঁধন খুলে যায়। কিন্তু এ সময় তিনি কিছু করতে পারেননি।

এপর বিভিন্ন জায়গায় বাসের গতি কমিয়ে ডাকাত সদস্যরা নামতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে ডাকাত দল থেকে যিনি বাস চালাচ্ছিলেন, জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নেমে যান। এ সময় বাসটি খাদে পড়ে যায়।

বাসযাত্রীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাদের উদ্ধার করেন। অনেক যাত্রী বাসের জানালা দিয়ে বের হন। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের কাছে তারা ডাকাতির ঘটনা বলেন। এরপর ভুক্তভোগীকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বুধবার (৩ আগস্ট) তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে ভুক্তভোগীকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর আদেশ দেন।

ধর্ষণের শিকার নারীর চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন বলেন, তিন সদস্যের মেডিকেল টিম পরীক্ষা করেছেন। কিছু সাইন পজিটিভ আছে। সাইন অব স্ট্রাগল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি ধর্ষণ বলেই প্রতীয়মান হয়। ভুক্তভোগীর সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় : ২১১২ ঘণ্টা, ৪ আগস্ট, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।