ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নগদ কল সেন্টারে একদিন স্বপ্নের দিন

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
নগদ কল সেন্টারে একদিন স্বপ্নের দিন

এই দিনটা অন্যরকম। এই দিনটা কেবলই আনন্দের।

এই দিনটা পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে উৎসব করার দিন। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এই দিনটা অন্যরকম ত্যাগেরও বটে।  

আমাদের সমাজের রোজকারের জরুরি কাজ করে যাওয়া মানুষগুলো এমন ঈদের দিনেও পরিবার-বন্ধুদের রেখে ছুটতে হয় কাজে। এই যেমন মোস্তাফিজুর রহমান সাগর। সারাটা দেশ যখন ঈদের আনন্দে ভাসছে, তখনই সকাল বেলা তৈরি হয়ে তাকে চলে আসতে হয়েছে মিরপুরের অফিসে। রাশেদ কাজ করেন দেশের স্বনামধন্য একটি কল সেন্টারে। এখানে বসে নগদ বিষয়ে অনেক অনুসন্ধানের জবাব দিয়েছেন দিনমান। এর মাঝেই কখন ঈদের দিনটা চলে যাবে, তিনি টেরও পাবেন না - এমনটাই হয়েছে এর আগে সব সময়।

আজও তেমন প্রস্তুতি নিয়ে কল সেন্টারে এসেছিলেন সাগর। নিজের ডেস্কে বসে একটার পর একটা ফোন রিসিভ করছিলেন; অভিযোগ-অনুসন্ধানের জবাব দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই ফিসফাস শব্দে মনোযোগ কেটে গেল তার। পেছন ফিরে অবাক হয়ে দেখলেন ‘নগদ’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক স্বয়ং দাঁড়িয়ে তার পেছনে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে তানভীর এ মিশুক বললেন, ‘ঈদ মোবারক। ’

দিনশেষে সময়টার কথা বলতে গিয়ে সাগর আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। বলছিলেন, ‘ঈদের দিন পরিবার ছেড়ে এমন কাজ করাটা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম, এবারও এভাবে নিজেদের সময় কাটবে। কল্পনাও করতে পারিনি তানভীর স্যার আমাদের কাছে চলে আসবেন ঈদ করতে। এখন মনে হচ্ছে, এই ঈদটা আসলেই খুশির দিন ছিল। ’

কেবল সাগর নয়, এমন ঈদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আজ পেয়েছেন ‘নগদ’ কল সেন্টারে কাজ করা কয়েকশ ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। সারা বছর এই মানুষগুলোর কণ্ঠই দেশের কোটি মানুষের কাছে ‘নগদ’-এর প্রতিনিধিত্ব করে। এই মানুষগুলোই ২৪ ঘণ্টা সচল রাখেন নগদের কণ্ঠস্বর। আর ঈদের ছুটিতে নিজেও পরিবারের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে সেই মানুষগুলোর কাছেই ছুটে গেছেন তানভীর এ মিশুক।  

ঈদের দিন কল সেন্টারের এই যোদ্ধাদের জন্য একটু উপহার পাঠিয়ে কাজ সারতে পারতেন। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কেক হাতে তার এই ছুটে আসা সবাইকে অবাক করেছে। তানভীর এ মিশুক অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছেন না। তিনি হেসে বললেন, ‘ঈদ তো পরিবারের সঙ্গে কাটানোর উৎসব। আর এরাই তো আমার পরিবার। আজ নগদ যে অবস্থানে এসেছে, তার পেছনে বড় একটা অবদান এই মানুষগুলোর। ওনারাই কিন্তু নগদ নিয়ে সব কথার জবাব দেন মানুষকে। ওনারা আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। আজ এই খুশির দিনে তাদের সঙ্গে একবার দেখা করতে পেরে আমি খুশি। ’

তানভীর এ মিশুক যেমন খুশি, তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি এখানকার যোদ্ধারা। তাদেরই একজন তানজিমা হক বলছিলেন, ‘পরিবার-বন্ধুদের ছেড়ে ঈদের দিনটা কাজ করাটা একটু হলেও কষ্টের। কিন্তু আজ অফিসের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন তাদের পরিজনদের রেখে আমাদের পাশে এসে সময় কাটালেন, আমাদের সব কষ্ট দূর হয়ে গেল। আসলে আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে, ওনারা এভাবে এসে আমাদের সময় দেবেন। ’

ঈদের দিন এই কল সেন্টার কর্মীদের সঙ্গে কাটানোর ব্যাপারটা ‘নগদ’-এ শুরু করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ সেলস অফিসার মো. শিহাব উদ্দিন চৌধুরী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক নিজেই হেসে বলেন, ‘শিহাব এ ক্ষেত্রে আমাদের পথপ্রদর্শক। ’

আর শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছিলেন, ‘প্রথম যে বছর নগদ-এর একজন হিসেবে ঈদ কাটাচ্ছিলাম, আমার মনে হলো, আমার পরিবারের একটা অংশ তো এখনও কাজ করছে। আমার উচিত, তাদের সঙ্গে সময়টা কাটানো। সেই ভাবনা থেকে প্রতি বছর ঈদে আমি এখানে চলে আসি। ’
শিহাবউদ্দিন চৌধুরী বা তানভীর এ মিশুকের এই চলে আসাটা আসলে কেবল বেড়াতে আসা নয়। এটা আসলে অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি করে। নগদ কল সেন্টার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিকনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরীফ বলছিলেন, ‘আমাদের জন্য এই কল সেন্টার, এই অফিসই আমাদের বাড়ি। ঈদের দিনও তাই এখানেই সময় কাটে। আজ আমাদের পার্টনার প্রতিষ্ঠানের এমডি স্বয়ং যখন এখানে হাজির হয়েছেন, এটা আসলে আমাদের কাজে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। ’

ঠিক এই কথাটাই বলছিলেন কল সেন্টারের এজেন্ট সাগর। তিনি একটু পরিষ্কার করে বললেন, ‘ওনার এই উপস্থিতির ফলে আমরা ম্যাসেজ পেলাম যে, আমরা একা নই। আমাদের ফেলে রেখে ওনারা নিজেদের মতো থাকেননি। আমাদের মধ্যেই আছেন। এর ফলে আমাদের আরও ভালো কাজ করার আগ্রহ তৈরি হলো। ’

সেই আগ্রহটা কল সেন্টার জুড়ে মহা ব্যস্ততায় ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সামলাতে থাকা মানুষগুলোর চঞ্চলতা দেখেই বোঝা গেল। একেক জন মানুষ যেন নিজের পুরোটা উজাড় করে দিচ্ছেন গ্রাহকের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে। এই দৃশ্য দেখে চুপ থাকতে পারলেন না তানভীর এ মিশুক। তিনিও চাইলেন সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলার এই রোমাঞ্চটা টের পেতে।
 
এক এজেন্টের চেয়ারে বসে একেবারেই অপরিচিত এক নগদ গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ শুরু করলেন তানভীর এ মিশুক। কয়েকটা সেকেন্ডের মধ্যে নিজেকে একজন দক্ষ এজেন্টে পরিণত করে ফেললেন। গ্রাহকের প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন, তার অসুবিধার জন্য নগদ-এর পক্ষ থেকে মার্জনা চাইলেন এবং তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। কয়েক মিনিট পর যখন চেয়ার ছেড়ে উঠলেন, তখন তানভীর এ মিশুকের মুখে অন্যরকম এক তৃপ্তির ছোঁয়া।  

হেসে বললেন, ‘গ্রাহকের সঙ্গে আগে অনেকবারই কথা বলেছি। কিন্তু কল সেন্টারে বসে অচেনা গ্রাহকের সঙ্গে এভাবে এই প্রথম কথা বললাম। এটা দারুন এক অনুভূতি। গ্রাহককে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। ’

এই ভালো লাগার মধ্যে কয়েকদিন ধরেই আছেন তানভীর এ মিশুক। এই কল সেন্টারে আসার আগে, ছুটি শুরুর আগের দিনটায় ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিনি ‘নগদ’ প্রধান অফিসের সাপোর্ট স্ট্যাফদের সঙ্গে। তাদের উপহার দেওয়া, কোরবানির ব্যবস্থা করা, সবই করেছেন। ফলে তার তৃপ্তিই স্বাভাবিক।  

তানভীর এ মিশুকের উপস্থিতি যেন মিরপুরের এই অফিসটাতে প্রাণের জোয়ার এনে দিয়েছিলো। এখানকার কর্মীরাই গানের আসর বসিয়ে ফেললেন। তাদের কণ্ঠে কখনো আইয়ুব বাচ্চু, কখনো বাপ্পা মজুমদার হাজির হলেন এখানে।
অনানুষ্ঠানিক এই গানের আসর শেষ করে বের হতে হতে তানভীর এ মিশুক বলছিলেন, ‘যেন জীবনের সেরা ঈদ আনন্দ কাটিয়ে গেলাম আজ এখানে। স্বপ্নের মত একটা দিন কাটলো। ’ এ যে সবার জন্য স্বপ্নের একটা দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।