ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফ্রি দিলেও নেয় না খাসির চামড়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
ফ্রি দিলেও নেয় না খাসির চামড়া ছবি : শাকিল আহমেদ

ঢাকা : সারা দেশে পালিত হচ্ছে ঈদুল আযহা। সৃষ্টিকর্তার কাছে ত্যাগ শিকার করে কোরবানি দিয়েছেন অনেকেই।

তাদের মনে খুশি থাকলেও নেই চামড়া ব্যবসায়ীদের। খাসি কোরবানি দেওয়াদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের কাছে গেলেও তাদের এ চামড়া নেওয়ায় আগ্রহ নেই।

ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দুপুর থেকে কোরবানির চামড়া নিয়ে যাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় চামড়ার আড়ত লালবাগের পোস্তায়। সেখানকার ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া নিলেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না খাসির চামড়ায়। পিস প্রতি ১০-১২ টাকা খরচ করতেও রাজি নন তারা। ফ্রি দিলেও নিচ্ছেন না।

রোববার (১০ জুলাই) রাজধানীর লালবাগের পোস্তায় সরেজমিনে এ চিত্র দেখা যায়। বিপাকে পড়া ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানালেন, চাহিদা না থাকায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা পিস প্রতি কিনে আনা ছাগলের চামড়া কেউ নিচ্ছেন না। আবার কেউ সামান্য আগ্রহ দেখালেও ১০-১২ টাকার বেশি দিতে রাজি হচ্ছেন না।

তাদের অভিযোগ, মূল চামড়ার ব্যবসায়ীরা খাসির চামড়া নিতে না করে দিয়েছেন। যে কারণে কেউ এ চামড়া কিনছেন না।

সোনারগাঁও থেকে পোস্তায় চামড়া নিয়ে এসেছেন আবদুল রশিদ। ১৪০ পিস গরুর চামড়া নিয়ে এসেছেন তিনি। গত বছর খাসির চামড়া নিয়ে এসে ফেলে দিতে হয়। ফলে এ বছর আনেননি। না এনেই বরং ভালো করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে মোট ৫০টি চামড়া নিয়ে আসেন সোহরাব হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিকেলে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটিও চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। ১৫ টাকা পিস ধরে এসব চামড়া কিনে আনি। এখন ১০ টাকা করে বিক্রি করতে চাইলেও কেউ নিচ্ছেন না। তাদের ফ্রি দিতেও চেয়েছি। তাও নিচ্ছেন না। কী করবো বুঝতে পারছি না। চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মো. হেলাল বাংলানিউজকে জানান, খাসির চামড়া বিনামূল্যে নিলেও এটি সংরক্ষণের জন্য ৫০ টাকা করে খরচ পড়বে। এই চামড়া দিয়ে তেমন কোনো কাজও হয় না। এ কারণে ট্যানারি মালিক ও আড়তদার কেউ খাসির চামড়া কেনেন না।

ছবি : শাকিল আহমেদআমীর হোসেন অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী হাজী মো. আমীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ফড়িয়ারা না বুঝেই চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। গতবছরও ছাগলের চামড়া রাস্তায় নষ্ট হয়েছে। এই চামড়াটার কোনো চাহিদা নেই। কিনে নিলেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা সংরক্ষণের পেছনে খরচ হয়। এক পিস চামড়ার পেছনে এত খরচ করেও যদি বিক্রি করতে না পারি, তাহলে কিনে লাভ কী?

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আমাদের ব্যবসাটি আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাসির চামড়ার কোনো চাহিদা নেই। তাই আমরা খাসির চামড়া এবার কিনছি না। আর কিনলেও তা খুব অল্প পরিমাণে। যে কারণে এবার এ চামড়ার কোনো দাম ওঠেনি।

প্রতি বছরের ন্যায় সরকার এবারও লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। সারা দেশে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা। খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা বর্গফুট নির্ধারিত আছে। গতবছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ধরা হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গতবছর সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারিত ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার।

বাংলাদেশ সময় : ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২২
জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।