ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে দক্ষিণাঞ্চলে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে দক্ষিণাঞ্চলে

খুলনা: ২৫ জুন, প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধনী দিন। এ মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় গোটা বাংলাদেশ।

উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে থাকা খুলনা ও তার আশপাশের অঞ্চলের জনগণের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে, তা তো অনুমেয়। সেতু খুলে দেওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক প্রভাবও বাড়বে ইতিবাচক হারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখের দ্বার উন্মোচিত হবে। এ সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা।

শুধু তাই নয়, পাল্টে যাবে জীবনযাত্রার মান। মৎস্য, কৃষি ও পর্যটন ব্যবসায় আসবে নতুন নতুন সম্ভাবনা। ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে ছোঁয়া লাগবে আধুনিকতার।

দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত-হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প। যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে এ খাতেও প্রভাব বাড়বে। পণ্য পরিবহনের খরচও কমবে।

একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে।

সামাজিক সংগঠন গ্লোবাল খুলনার আহ্বায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফল ভোগ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। কর্মসংস্থান, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দরিদ্রতা  কমবে। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে এ সেতু।

দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ভাঙা থেকে খুলনা এবং মোংলাবন্দর পর্যন্ত কমপক্ষে ছয় বা আট লেন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া প্রয়োজন। এতে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক গতিশীল হবে। প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশও লাভবান হবে।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরে গতিশীলতা আরও বাড়বে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানিতে উৎসাহিত হবেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন মোংলার মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাবে। ফলে পরিবহন খরচ কমবে ও পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে মোংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে।

তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় আছে, যা তারা সম্পৃক্ত করতে চান। বিষয়গুলো হলো- ভাঙা থেকে মোংলা পর্যন্ত যে সড়ক আছে; সেটিকে ৬ লেনে রূপান্তরিত করা। খান জাহান আলী (র.) বিমান বন্দর অতিদ্রুত চালু, মোংলা নদীর ট্রেজিংয়ের পরিধি বাড়ানো (৭ মিটার থেকে ৮ মিটারে উন্নতকরণ)। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। সুলতান বলেন, এখন মোংলা থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়। যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব বেড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মাদ মূসা বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর পরের যে অংশটুকু রয়েছে, মোংলা বন্দরের সঙ্গে সেটির যোগাযোগ। রাস্তাটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এটি হলে ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে এ বন্দর। মোংলা বন্দর পর্যন্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ টেকসই করা এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরও বলেন, যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সুফল পাওয়া যাবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এ বন্দর ভূমিকা রাখছে। উত্তরাঞ্চলের অনেক আমদানিকারকও এখন এ বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এই সক্ষমতা আমাদের আমদানিকারকরা ব্যবহার করতে পারলে এর আগে বন্দরে যে রেকর্ড হয়েছে সেটি ছাড়িয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২২
এমআরএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।