ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ-গর্ভপাতের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ-গর্ভপাতের অভিযোগ

বরিশাল: ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ এনেছেন এক তরুণী। এ বিষয়ে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনও করেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১১ টায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, অভিযোগকারী তরুণীর সঙ্গে গত ১০ বছর ধরে স্বামীর পরিচয়ে থাকছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। এর সাক্ষী তাদের ভাড়া বাসার বাড়িওয়ালারা।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তিনি অন্য ধর্মের। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি ঝালকাঠি সমাজ সেবা কার্যালয়ে ছয় মাস মেয়াদি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে যাতায়াতের সময় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন সমাজসেবা কর্মকর্তা দেলোয়ারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ অবস্থায় পরিবার থেকে তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়।

তরুণী আরও জানান, স্বামীর সংসারে থাকা অবস্থায় দেলোয়ার প্রায়ই তাকে কল করতেন। যোগাযোগে বারণ করলেও তিনি শুনতেন না। বিষয়টি জানাজানি হলে এক পর্যায়ে তরুণীর সংসার ভাঙে। পরে দেলোয়ার তকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বাবার বাড়ি ছেড়ে তার কাছে চলে যান। তখন দেলোয়ার ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন এবং এখনও সেখানেই আছেন।

তিনি বলেন, বরিশাল এসে দেলোয়ার আমাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন। প্রথমে নগরের নথুল্লাবাদ ভাড়ার বাসায় বসবাস করতে শুরু করি। পরে সিএন্ডবি রোড মীরা বাড়ির পুল সংলগ্ন এলাকার একটি বাসা ভাড়া নেন তারা। এরপর একই এলাকার অপর একটি বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। এখনও সেখানেই থাকছেন।

এই বাসায় থাকা অবস্থায় দেলোয়ার ভোলা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আসতেন। রোববার কর্মস্থলে ফিরতেন। সরকারি ছুটির দিনেও তিনি ওই বাসায় আসতেন। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসতেন। আমাদের ১০ বছর একত্রে সংসার করার বিষয়টি জানেন ভাড়া বাসার বাড়িওয়ালারা।

তরুণী আরও বলেন, সংসার জীবনে আমি দুবার গর্ভবতী হই। কিন্তু দেলোয়ার আমার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি দেলোয়ারের কাছে সমাজ ও ধর্মীয়ভাবে বৈধ স্ত্রীর অধিকার চাই। প্রয়োজনে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবো বলেও জানাই। এ সব না মানলে আর শারীরিক সম্পর্ক করবো না বলে জানাই। এরপর দেলোয়ার আমাকে ধর্ষণ করেন। তারপর থেকে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। বাসায় তো আসেনই না। আমি একাধিকবার ভোলায় গিয়ে দেলোয়ারকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও ব্যর্থ হই। বর্তমানে আমি মানবেতর জীবন-যাপন কর‌ছি।

তিনি আরও জানান, উপায়ান্তর না পেয়ে এ ঘটনার অনুকূলে গত ১১ মে দেলোয়ার হোসেনকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন তিনি। দেলোয়ার পটুয়াখালী সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের ঘেরাখালী গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ২৩ মার্চ তিনি বরিশাল জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে একটি আবেদন করেন। গত ৩ এ‌প্রিল বিভাগীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তাছাড়া ভোলা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, কুরিয়ার সার্ভিসে ঢাকা মহাপরিচালকের বরাবর আবেদন করেও কোনো সুফল পাননি এই ভুক্তভোগী।

তিনি বলেন, আমি প্রতারণার শিকার হলেও মনে-প্রাণে দেলোয়ার হোসেনকে স্বামী হিসেবেই গ্রহণ করেছিলাম। এখন আমি স্বামীর অধিকার চাই।

ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানান, তিনি অভিযোগকারী তরুণীকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। পরিচয়ের পাশাপাশি একত্রে ছবি থাকতেই পারে। কিন্ত ওই তরুণী যা বলেছেন, তা সত্য নয়। তরুণীর বাসায় তিনি মাঝেমধ্যে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলেও তিনি স্বীকার করেন।

ভোলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। এমনকি অভিযোগকারী তার কাছে গিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২২
এমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।