ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

না’গঞ্জে বেতনের দাবিতে ৭ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
না’গঞ্জে বেতনের দাবিতে ৭ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ নারায়ণগঞ্জ (মানচিত্র)

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সদর ও সোনারগাঁ উপজেলায় বকেয়া বেতনের দাবিতে পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন সাত পোশাক কারখানার শত শত শ্রমিক। তবে লকডাউনের কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় বেতন দিতে বিলম্ব হচ্ছে দাবি করেছে পোশাক শিল্প কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। 

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ফতুল্লা, টিপরদী ও কাঁচপুর বিসিক এলাকায় নিজ নিজ কারখানার সামনে অবস্থান করে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা শান্ত হয়ে বাসায় ফিরে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ে টিপরদী এলাকার ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডের দু’শর বেশি শ্রমিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে সৃষ্টি হয় যানজট। পরে ১১টায় কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকদের বরাত দিয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, ‘৭ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু গণপরিবহন বন্ধ ছিল তাই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়নি। শ্রমিকেরা চলে যেতেই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। ’

শ্রমিকেরা জানান, ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডে চারশর বেশি শ্রমিক কাজ করেন। যার মধ্যে বিভিন্ন বিভাগের শ্রমিকদের গত কোরবানীর ঈদের পর থেকে বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে তাদের ৭ মাসের বেতন জমে যায়। কিন্তু ২৫ মার্চ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সব বেতন ১৬ এপ্রিল পরিশোধের ঘোষণা দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। ১৬ এপ্রিল সকালে শ্রমিকেরা এসে কারখানা বন্ধ দেখে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে।

এ বিষয়ে জানতে ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ম্যানেজার মো. আকতার হোসেনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ জানান, ‘ইউসান গার্মেন্টস শ্রমিকদের মূলত গত দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তবে কোনো কোনো ইউনিটে ক’জন শ্রমিকের আরও বেশি বেতন বকেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে সমাধানের জন্য বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ কর্তপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আগামী রোববার (১৯ এপ্রিল) এ সমস্যা সমাধান করা হবে। শ্রমিকদের এ আশ্বাস দিলে তারা বাসায় চলে যায়। ’

এছাড়াও সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকার জয়া গ্রুপ ও কাঁচপুর বিসিক এলাকার রাহী নিট কম্পোজিট নামে দুটি কারখানার শতাধিক শ্রমিক নিজ নিজ কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এ বিষয়ে শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে জয়া গ্রুপের ৫০ জন শ্রমিক ও  রাহি নিট কম্পোজিটের ৬০ থেকে ৭০ জন শ্রমিক বিক্ষোভ করেন। মালিকপক্ষে সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ২৫ এপ্রিলের আগে বেতন পরিশোধ করবেন আশ্বাস দিয়েছেন। পরে শ্রমিকেরা বাসায় চলে যায়। ’  

এদিকে ২৫ এপ্রিলের আগে মার্চ মাসের বেতনের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহরের চাষাঢ়া বিকেএমইএর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলার পুলিশ লাইন্স এলাকার ‘ইউনিটেক্স কটন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেড’ নামের এক পোশাক কারখানার দু’শ শ্রমিক। তবে বিকেএমইএর অফিস বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা কোনো আশ্বাস না পেয়ে মিছিল নিয়ে বাসায় ফিরে যায়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, ‘মার্চ মাসের বেতন যদি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেওয়া হয় তাহলে দু’মাসের বাসা ভাড়া হয়ে যাবে। তখন আমরা বাসা ভাড়া দিবো নাকি খাবার যোগাড় করবো। আগামী রোববারের (১৯ এপ্রিল) মধ্যে আমাদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। ’

এছাড়াও ফতুল্লার নরসিংপুর এলাকার সায়েম ফ্যাশন, কাঠেরপুর এলাকার কেকটেক্স গার্মেন্টস, চাঁদমারী এলাকার সান নীট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান করে বিক্ষোভ করে। যার মধ্যে সায়েম ফ্যাশন নামে গার্মেন্টস কারখানার দু’শর বেশি শ্রমিক ঢাকা-ফতুল্লা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে (কাশিপুর-মুক্তারপুর সড়ক হিসেবে পরিচিত) বিক্ষোভ মিছিল করে।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ বলেন, সবগুলো গার্মেন্টসে ১৬ এপ্রিল বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকেরা এ বিক্ষোভ করে। তাদের আগামী সোমবার (২০ এপ্রিল) সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করে যাচ্ছি। সব এক সঙ্গে সম্ভব হচ্ছে না। তাই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এর জন্য আমরা বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ কে চিঠি দিয়েছি। যাতে দ্রুত বেতন পরিশোধ করে সমস্যা সমাধান করা হয়। অন্যথায় বেতন পরিশোধ না করার অপরাধে কারখানার মালিককেই আটক করা হবে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলভ চৌধুরী জানান, যারা এখনও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি সেইসব কারখানার মালিক পক্ষকে আমরা বলেছি অবশ্যই যেন আজকে (বৃহস্পতিবা) কিংবা আগামী রোববারের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। এমনকি তাদের সঙ্গে আজকেও ফোনে কথা চলছে। তাদের বলছি যেভাবে হোক শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করে দিবেন। বিকেএমইএর চেয়ারম্যান ও দুইজন পরিচালক এ বিষয়টি তদারকি করছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘কঠোর নির্দেশনা আমরা আগেই দিয়েছি, যেকোনো অবস্থায় মার্চ মাসের বেতন বিলম্ব করা যাবে না। তবে সমস্যা দাঁড়িয়েছে হঠাৎ করে নারায়ণগঞ্জ লকডাউন ঘোষণা করায় অনেক ব্যাংক তাদের শাখাও বন্ধ করে দিয়েছে। যার জন্য লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। এখন আমরা অনুরোধ করে গতকাল (১৫ এপ্রিল) প্রাইম ব্যাংক খুলিয়েছি। তারা তাদের গ্রাহকের টাকা গুলো দু’দিনে দিচ্ছে। এভাবে অন্য ব্যাংকগুলো অন্তত একদিনের জন্য খুলতে বলবো। এসব কারণে বেতন দিতে দেরি হচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২০
এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।