হারিস মিয়া বললেন, এভাবেই সময় কাটছে। সারাদিন বাসায় ঘুমায় ছিলাম।
পড়ুন>>করোনা আতঙ্কে কষ্টে দিন কাটছে ছিন্নমূল মানুষের
যে শহরের যানজটে বিরক্ত নগরবাসী বারবার শহরটা ছেড়ে দিতে চান, সেই নগরবাসী এখন গৃহবন্দী। সকাল থেকে রাত অব্দি শহরজুড়ে চলে না গাড়ি। দিনের আলোয় তাও কিছু মানুষের দেখা মেলে, সন্ধ্যা এলে অদ্ভূত এক শূন্যতা এসে ভর করে তিলোত্তমাকে। লাখো প্রাণে কল্লোরিত রাতের ঢাকা এখন ভূতুড়ে নগরীতে রূপ নিয়েছে।
শুক্র ও শনিবার, এ দুই রাত ঢাকা শহর ঘুরে দেখা মিললো ভিন্নতর দৃশ্য। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো স্থান- বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখ, নতুন বাজার, বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণী মোড়, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্থান, দৈনিক বাংলা ও মতিঝিলের রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন ভবনের নিরাপত্তাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া আর কাউকেই সেভাবে চোখে পড়েনি।
রাত পৌনে আটটার দিকে এশার নামাজ আদায় করতে অনেকে ঘর থেকে বের হলেও এরপর রাস্তায় সাধারণ মানুষের দেখা মেলেনি।
শনিবার রাত আটটার দিকে রাজধানীর অন্যতম প্রধান আবাসিক এলাকা সেগুনবাগিচায় প্রবেশ করতেই গা হিম করে যেতে বাধ্য। রূপকথার গল্পের মতো, কেউ যেন ‘রূপার কাঠি’ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে গেছে সদা ব্যস্ত এই আবাসিক এলাকাকে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ ভবনের পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া গলি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই রাস্তায় কুকুরের বাঁধা। সারাদিন মানুষ না দেখে প্রাণিগুলো মানুষ দেখতেই যেন সম্ভাষণ জানাচ্ছে। কিছু দূর পেরিয়েই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ভবন। ঢাকা শহরে কর্মরত প্রতিবেদকদের আড্ডাস্থলটি এখন জনমানব শূন্য।
ডিআরইউয়ের সামনের মুদি দোকানদার তাহের বললেন, সারাদিন কত মানুষ, এখন কেউ নাই। রাতে তো রাস্তায় কুকুর ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। ভাইজান, এ ঢাকা আর ভালো লাগে না।
তাহেরের দোকানের সামনে দড়ি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বললেন, পুলিশ থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে। তবে দড়ি আমরা আমাদের নিজ উদ্যোগেই লাগিয়েছি।
সেগুনবাগিচা পেরিয়ে পল্টন মোড়ে কাউকেই নজরে পড়েনি। তবে দৈনিক বাংলা মোড় ছিল বেশ জমজমাট। কাঁচা সবজির বাজার বসেছে সেখানে। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মানুষের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদেরও বাজার করতে দেখা গেলো সেখানে। তবে এটি পেরিয়ে যেতেই আবার সুনসান নিরবতা।
এই সুনসান নীরবতার মধ্যেই রাতের ঢাকা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মী সাহাদাত পারভেজ পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ঘরে ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন।
এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, এই করোনাকালে আপনারা যারা পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে রাতে বাসায় ফেরেন, তারা একটু চোখ কান খোলা রেখে সাবধানে চলাফেরা করবেন। গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে বাইকে করে বাসায় ফেরার সময় কারওয়ান বাজারে স্টার হোটেলের কাছের রাস্তায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ি। ওরা আমাকে জোর করে মোটর বাইক থেকে নামানোর চেষ্টা করে। আমি দ্রুত বাইক টান দিয়ে নিরাপদে চলে আসি। এই সময়ে রাস্তা খুবই নীরব ও নিষ্প্রাণ থাকে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২০
ডিএন/এমআইএইচ/এমএইচএম