ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘরেই নামাজ আদায় করুন: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
ঘরেই নামাজ আদায় করুন: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মুসলিমদের মসজিদে না গিয়ে ঘরেই নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সবাইকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার অনুরোধও করেছেন তিনি।

বুধবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিশ্বের ১৯৪ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি।

এ ভাইরাস সংক্রমণে এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ১৮ হাজার ৮৯২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে কমপক্ষে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৮৬৩ মানুষ।

সৌদি আরবের জেষ্ঠ্য আলেমদের পরামর্শে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মক্কায় মসজিদুল হারাম ও মদিনায় মসজিদে নববীসহ সৌদি আরবের সব মসজিদে জামায়াতে নামাজ আদায় বন্ধ করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকারিভাবে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর একটি হাদিস অনুযায়ী, মুসলিম বিশে^র বিভিন্ন দেশে আজানে ‘হাইয়া আলা আল-সালাহ’ (যার অর্থ নামাজ পড়তে আসুন) এর পরিবর্তে ‘আল-সালাতু ফি বয়ুতিকুম’ (যার অর্থ বাড়িতে/যেখানে আছেন সেখানে থেকেই নামাজ পড়ুন) বলা হচ্ছে।
 
জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ঘরে ইবাদত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ’

সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। ’

‘করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। ’

ঘরে ইবাদাত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাই-বোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ’

এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ভাষণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখা এবং গতরাত (২৪ মার্চ) থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করাসহ দেশের সব স্কুল কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা; উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত; সব পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ করা; যেকোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে।

‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন। ’

হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা করোনা ভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ - আপনাদের হোম কোয়ারেন্টিন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। ’

‘মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন,’ বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। ’

আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন ও সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক মানুষের যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিলোপ ঘটায়। ’

তিনি বলেন, ‘সব সময় খেয়াল রাখুন আপনি, আপনার পরিবারের সদস্য এবং আপনার প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন। আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে। ’

ধৈর্য্য ও সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয়-স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তারাও তাদের নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সবার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে প্যানডামিক বা মহামারি হিসেবে ঘোষণা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন

** জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
** স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জনসমাগম করবেন না: প্রধানমন্ত্রী
** যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
** করোনার উপসর্গ দেখলে হটলাইনে ফোন করুন: প্রধানমন্ত্রী
** ঘাটতি নেই, কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না: প্রধানমন্ত্রী 
** শ্রমিকদের বেতন দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা
** নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করুন, বিত্তবানদের প্রধানমন্ত্রী
** বেশি করে ফসল ফলান, কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী
** ‘চিকিৎসকদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী আছে’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২০
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।