ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘প্লাস্টিক ফুল’ চাষিদের গলার কাঁটা

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
‘প্লাস্টিক ফুল’ চাষিদের গলার কাঁটা

সাভার (ঢাকা): ২০০৮ সাল থেকে শ্যামপুরে নিজের পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছিলেন আলমগীর। সে সময় তার গোলাপ বাগানে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতেন। তখন গোলাপ চাষ করে ভালো লাভও পেতেন।

কিন্তু বিভিন্ন কারণে শেষের তিন বছরে পাঁচ বিঘা জমি থেকে এখন দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করছেন এই চাষি। ফুল চাষে কয়েক বছর লাভের মুখ দেখলেও গত তিন বছর ধরে লোকসানের পাল্লা যেন তার ভারী হচ্ছিল।

তাই বাধ্য হয়ে এখন ২ বিঘা জমিতে কোনো রকম করে গোলাপের চাষ করছেন।  

ফুল চাষে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন আলমগীরের মতো আরও অনেক চাষিই। কোনো কোনো চাষি আবার জমি বিক্রি করে দিয়ে অন্য কোনো কাজ করছেন।  

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাভারের গোলাপ গ্রামের মোস্তাপাড়া বাজারে গেলে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী আলমগীর অসহায় হয়ে বাংলানিউজের কাছে এভাবেই তার ফুল বাগানের কথা বলতে থাকেন।
 
আলমগীর আরও বলেন, বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে আমরা আগে ট্রাকে ট্রাকে ফুল বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের ফুল তৈরি হওয়ায় আমাদের ফুলের চাহিদা অনেক কমে গেছে। রাজধানীর চকবাজারে প্লাস্টিকের চায়না যে ফুলগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো দেখতে হুবহু গাছের ফুলের মতোই। মানুষ এখন আর গাছের ফুল কেনেন না। এখন নানা অনুষ্ঠানে কাঁচা ফুলের জায়গায় কৃত্রিম ওই ফুলের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। তাই প্লাস্টিকের ফুল বর্তমানে আমাদের চাষিদের গলার কাঁটা।

গোলাপ গ্রামের বাগনীবাড়ী এলাকার ফুল চাষি ওহিদ বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩ বছর আগে ফুলের দাম বেশি ছিল। ফুল চাষ করে কৃষক লাভবান হতো। কিন্তু এখন প্লাস্টিকের ফুল বাজারে আসার কারণে, গাছের ফুলের ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষক। গত ২ বছর আগে একটি রঙিন ফুলের স্টিক (গ্ল্যাডিওলাস) ১৫-১৮ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও এখন তা ৪-৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

আরেক ফুল চাষি সাগর তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে আর্টিফিশিয়াল প্লাস্টিকের গোলাপ ফুলে ভরে যাওয়ায় চাষিরা অনেকই ফুল চাষ বাদ দিচ্ছেন। তবে আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, বাজারে থাকা প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি ও তৈরি বন্ধ করা হোক। তাহলে আমাদের বেচা-বিক্রি একটু বাড়বে।  

এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে ফুলের বার্ষিক বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি প্লাস্টিকের ফুল আমদানি বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ফুল চাষিরা।  

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে প্রয়োজন মেটানো যায়, কিন্তু ওই ফুলগুলোর প্রতি ভালোলাগা কাজ করে না। ফুল বলতে মানুষ কাঁচা ফুলকেই বোঝে। যে ফুলে ঘ্রাণ আছে, সৌরভ আছে। তাই কাঁচা ফুলের চাহিদা কমবে না, বরং বাড়বে। ফুল সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে কাঁচা ফুলের চাহিদা অবশ্যই বাড়বে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad