ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ডিজিটাল আইনের মামলায় কবি হেনরী স্বপন গ্রেফতার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
ডিজিটাল আইনের মামলায় কবি হেনরী স্বপন গ্রেফতার কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেফতারের পর আদালতে নেওয়ার পথে

বরিশাল: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেফতার করেছে বরিশালের কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ। ইতিমধ্যে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বরিশাল নগরের উদয়ন স্কুল সংলগ্ন ক্যাথলিক চার্চের ফাদার ল্যাকাভালিয়ের গোমেজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

এদিকে হেনরী স্বপনের সহকর্মীরা জানান, সাদা পোশাকধারীরা হেনরী স্বপনকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়, যা সকলের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তাকে গ্রেফতার নিয়েও লুকোচুরি করেছে পুলিশ। নিজেদের হেফাজতে হেনরী স্বপনকে রাখার কথা বললেও থানায় গিয়ে দেখা মেলেনি তার। পরে আদালতে তাকে পাঠানো হলেও সেখানে থানা থেকে মামলার কাগজ পাঠানো হয়নি।

কবি হেনরী স্বপন গ্রেফতারের পরপরই এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, হেনরী স্বপনকে এভাবে গ্রেফতারের ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগে হেনরী স্বপনের বাসায় গিয়ে যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, সেটা ছিলো উদ্বেগের বিষয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন খন্দকার বলেন, হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলাটি পুরোপুরি হয়রানিমূলক। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে লুকোচুরি খেলেছে।

তিনি বলেন, প্রথিতযশা কবি হেনরী স্বপন যখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন, তাকে নানানভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছিলো, তখন হেনরী স্বপন তো পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কোতোয়ালি থানা পুলিশ তখন তার লিখিত আবেদন নেয়নি। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, হেনরী স্বপনের নিরাপত্তা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।

বরিশাল কবিতা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মেহেদি হাসান বলেন, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার বিষয় নিয়ে হেনরী স্বপন প্রতিবাদমুখর ছিলেন। শ্রীলঙ্কায় যে মানবিকতার বিপর্যয় হয়েছে তার প্রতিবাদ করেছেন তিনি। আর এর প্রতিবাদ করতে গিয়েই তিনি শ্রীলঙ্কায় হামলার পরের দিনে নিজ সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন। আমি মনে করি তিনি একটি যৌক্তিক বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা করা হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে কবি হেনরী স্বপনকে নানানভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিলো। সর্বশেষ শনিবার (১১ মে) দিবাগত মধ্যরাতে অজ্ঞাতনামারা তার বাসভবনে গিয়ে হুমকি দেয়। তারা হেনরী স্বপনকেকে বরিশালত্যাগ করাসহ রক্তাক্ত জখমের হুমকিও দিয়েছিলো।  

এরপর থেকেই কবি হেনরী স্বপন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। গ্রেফতারের আগে তিনি বাংলানিউজকে বলেছিলেন, আমার কক্ষে লেখালেখির কাজ করছিলাম। শনিবার দিবাগত রাতে আনুমানিক আড়াইটার দিকে বাসার জানালায় দাড়িয়ে যুবক কণ্ঠে অজ্ঞাত দুজন ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পাশাপাশি স্বগোত্রীয় লোকদের বিরুদ্ধে লেখালেখি বন্ধ করা অন্যথায় অঙ্গহানি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।  

এ সময়ে হেনরী স্বপন আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার শুরু করলে হুমকিদাতারা পালিয়ে যায়।

হেনরী স্বপন দীর্ঘদিন যাবৎ তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের নানান অসঙ্গতি, অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। ২০১৫ সালে বরিশালের মুক্তমনা ৬ জনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ৬ জনের পক্ষে হেনরী স্বপন বাদী হয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

** ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ কবি হেনরী স্বপন

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad