ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে মন্তব্য করায় ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর ধুয়ে দিয়েছেন ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মেঘমল্লার বসু। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি শশীর কঠোর সমালোচনা করেন।
তাকে উদ্দেশ্য করে পোস্টে মেঘমল্লার লেখেন, আমি নিশ্চিত আমার এই বার্তা তোমার কাছে পৌঁছাবে না। আর যদি পৌঁছায়ও, তুমি হয়তো সেটিকে গুরুত্ব দেবে না, কারণ আমার ইংরেজি তোমার মতো হয়তো অতটা সাবলীল নয়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। রাষ্ট্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ, ক্রমবর্ধমান ইসলামোফ্যাসিবাদী প্রবণতা এবং বিপুল অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব সত্ত্বেও সাম্প্রতিক এ নির্বাচনে আমি প্রায় পাঁচ হাজার ভোট পেয়েছি।
বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী রাজনীতি নিয়ে থারুরের মন্তব্যের সমালোচনা করে মেঘমল্লার লেখেন, তোমার যে পর্যবেক্ষণ, মানুষ বড় দলগুলোর দুর্নীতিতে ক্লান্ত হয়ে বিকল্প খুঁজছে, এটা সঠিক। কিন্তু তুমি বুঝতে পারছো না যে, তোমার মন্তব্য আসলে বাংলাদেশে কেবলমাত্র অতি-ডানপন্থীদেরই সহায়তা করছে। এমন বিন্দুমাত্র বোধও তোমার নেই যে উপলব্ধি করবে, তুমি অজান্তেই জামায়াতের জন্য জনসংযোগ কার্যক্রম চালাচ্ছো।
‘যাই হোক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয় তোমার কাছে ‘উদ্বেগে’র বিষয় কেন? তুমি কি সেই একই ব্যক্তি নও যে কেরালায় শবরীমালা মন্দিরে (মাসিক থাকা নারীদের প্রবেশে) বিধিনিষেধের প্রশ্নে বামপন্থী সিপিআই (এম)-কে পরাজিত করার জন্য একটি ডানপন্থি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলে? যদি তুমি কোনো প্রতিবেশীকে উপদেশ দেওয়ার কথা ভাবো, তাহলে আগে জাতীয় নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করো। বলা হয়ে থাকে—যারা কাচের ঘরে বাস করেন, তাদের অন্যের বাড়িতে পাথর ছোঁড়া ঠিক না। ’
মেঘমল্লার বলেন, তিনটি ধারাবাহিক নির্বাচনে মোদী ও অমিত শাহকে পরাজিত করতে যারা ব্যর্থ, তাদের অন্য দেশের একটি ছাত্র পরিষদের নির্বাচনে কী হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিলাসিতা থাকা উচিত নয়। ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশে এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে, খোদ তোমার মন্তব্যই শিবিরকে শক্তি যোগাচ্ছে। তোমার যদি যথেষ্ট অবসর সময় থাকে, তাহলে তুমি আরও স্ট্যান্ড-আপ শো করতে পারো। শেষটা বেশ বিনোদনমূলক ছিল।
শশীর উদ্দেশে মেঘমল্লার বলেন, আমাদের নিজের চরকায় তেল দেওয়া দরকার। আমি আশা করি, ভারতীয় জনগণ অবশেষে ভোটে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করতে পারবে। আমাদের দেশে ইসলামোফ্যাসিস্টদের প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আনন্দের সঙ্গে আমাদের জীবনও বিসর্জন দেব। প্রয়োজন হলে একে অপরের সঙ্গে আমরা সংহতি দেখাব। কিন্তু দয়া করে উপদেশ দেওয়া বন্ধ করো। তোমরা আমাদের থেকেও কোনো অংশে ভালো নও।
এর আগে ডাকসুতে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্যানেলের ব্যাপক বিজয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভারতের কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তিনি বলেন, এ ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে থারুর লেখেন, বিষয়টি হয়তো বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছে তেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেনি। তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও বিএনপি উভয়ের প্রতিই মানুষের বিরক্তি তীব্র হয়েছে। অনেকেই ‘উভয়ের সর্বনাশ হোক’ মনোভাব থেকে জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। তাদের এই ঝোঁক ধর্মীয় উগ্রতার কারণে নয়, বরং এই বিশ্বাস থেকে যে জামায়াত, সঠিক হোক বা ভুল অন্তত দুই মূল ধারার দলের মতো দুর্নীতি ও কুশাসনে কলঙ্কিত নয়।
উদ্বেগ প্রকাশ করে শরীর থারুর আরও প্রশ্ন তোলেন, এ প্রবণতা কি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে? ভারতকে কি তখন প্রতিবেশী হিসেবে জামায়াতের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে?
এনডি/এমজে