ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে কঙ্কাল আর কঙ্কাল

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে কঙ্কাল আর কঙ্কাল ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে পড়ে আছে কঙ্কালসার রিকশাসহ বিভিন্ন সামগ্রী/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ১৫ ঘণ্টা আগেও পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যানশন ও সংলগ্ন এলাকার দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। হৈচৈ, অসংখ্য মানুষের আনাগোনা, মালামাল ওঠানো-নামানো, গাড়ি-রিকশার জটলা ইত্যাদি ইদ্যাদি। সেই এলাকায় এখনও সবই আছে। তবে শুধু কঙ্কালসার চেহারা সবকিছুর।

ওয়াহিদ ম্যানশনে কোনো রংচঙ নেই। পুরো বাড়িজুড়ে ক্ষতচিহ্ন।

কোনো তলার দেয়াল ভাঙা, বেরিয়ে আছে শুধু কংক্রিটের পিলার। কোনো তলায় খসে পড়েছে সব প্লাস্টার, গ্রিল বাঁকাচোরা, ভিতরে যে কিছু ছিল সেটা বোঝার উপায় নেই। কোনো ঘরে চিহ্ন আছে শুধু মাথার খুলির।

বাড়ির সামনের গলির রাস্তায় গাড়ি, রিকশা, সাইকেল সবই আছে। তবে শুধু ফ্রেম, যাকে বলা যায় অন্তঃসার শূন্য, কঙ্কাল। বাতাসে লাশের গন্ধ আর পোড়া ছাইয়ে মনে হচ্ছে কোনো প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ, মৃত্যুপুরী কিংবা ধূসর নগরী।  

কঙ্কালসার বাড়িটিপুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশ জুড়েই চকবাজার। কারাগারের অদূরেই অবস্থিত ওয়াহিদ ম্যানশন। এ ভবনই এখন মৃত্যুপুরী। পুরো ভবনটি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বাড়ির মূল মালিক ওয়াহিদ সাহেব বেঁচে আছেন না আগেই মরে গেছেন কউ বলছেন না ঠিককরে। তার দুই ছেলে আসাদ ও সোহেল বাড়িটির দেখাশোনা করতেন বলেই প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন আশপাশের লোকজন। এক ভাই থাকেন চিটাগাং। আরেকজন নাকি থাকেন পাশেই। তবে এ ঘটনায় তাদের কেউ মারা যাননি বলেই জানা গেছে প্রাথমিকভাবে।

কঙ্কালসার রিকশাফায়ার সার্ভিসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুশয্যায় ৪১ জন। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে।  

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা তখন। পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশ দিয়ে এগোতেই চোখে পড়লো শুধু ফায়ার সার্ভিসের স্পেশাল ওয়াটার টেন্ডারের সারি সারি গাড়ি। আকাশে টহল দিচ্ছিল সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের পাশাপাশি আগুন নেভাতে আকাশ থেকে পানি ছিটিয়ে কাজ করে ওই দুই হেলিকপ্টার।  

পুড়ে যাওয়া গাড়িভবনের সামনে যেতেই দেখা গেলো শুধু ধ্বংসস্তূপ। রাস্তায় পড়ে আছে জ্বলে ছারখার হওয়া কয়েকটি কার। তবে চালকের ভাগ্যে কি ঘটেছে, সেটা জানা যায়নি।  

রাস্তায় গাড়ির পাশাপাশি পড়ে আছে অসংখ্য রিকশা, খসে পড়া ইট, দোকানের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। বাতাসে ভাসছে পোড়া মানুষের গন্ধ। টাইলস করা ওয়াহিদ ম্যানশনে দেখা গেলো শুধু পোড়া ইট। শুধু এ ভবন নয়, পাশের কয়েকটি ভবনও আংশিক পুড়ে গেছে। পড়ে আছে পুড়ে যাওয়া দোকানের কিছু আসবাবপত্র।  

দমকল বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন ও মেইন্টেইনিং) শাকিল নেওয়াজ জানান, কি কারণে আগুন লেগেছে তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়।  

আর মরদেহের সংখ্যা কেমন থাকতে পারে জানতে চাইলে বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। অনুমানের উপর ভিত্তি করে কিছু বলা যায় না। তবে আমরা আশঙ্কা করছি, ভেতরে আরো মরদেহ থাকতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
টিএম/এএ

***চকবাজারে আগুন: বেড়েই চলেছে লাশের সারি
***
যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে কঙ্কাল আর কঙ্কাল
***বার্ন ইউনিটের ৯ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক
***আরও সতর্ক-মনযোগী হবো: ওবায়দুল কাদের
***চকবাজারের আগুন ‘ওয়েক আপ কল’
***নিরাপদ আশ্রয়ই কাল হলো তাদের
***ঢামেকে মরদেহ রাখার অধিকাংশ ফ্রিজ নষ্ট, সংরক্ষণে সমস্যা
***চকবাজারে নিহত শ্রমিকদের পরিবার পাবে ১ লাখ টাকা
**‘কেমিক্যাল কারখানা সরাতে সহযোগিতা করা হবে’
***আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় চকবাজারের ভয়াবহ আগুন
***সরকারের দায়িত্বহীনতায় চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড: ফখরুল
***অগ্নিকাণ্ডে হতাহত: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
***৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার, আরও থাকতে পারে: আইজিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।