ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১০ ডিসেম্বর নড়াইল মুক্ত দিবস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৩

নড়াইল: ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নড়াইল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নড়াইলের মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে নড়াইলকে মুক্ত করেন।



দিবসটি পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের স্মরণে দোয়ার মাহফিল, র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আ. গাফফার খান।

এছাড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা  হয়েছে।

জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর নড়াইলের এসডিওর বাসভবনকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের হাই কমান্ডের সদর দপ্তর করা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন নড়াইলের এসডিও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ, আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছ উদ্দিন লোহাগড়া হাই স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক করে বিশাল বাহিনী যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন।

৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনী দুটি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপক গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করলে শহর জনশুন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং হরিপদ সরদার, ভাটিয়া গ্রামের কালু বোস, সরসপুর গ্রামের প্রফুল্য মিত্রকে ধরে নিয়ে দাইতলা পুলের কাছে গুলি করে ফেলে রেখে চলে যায়।

ওই সময় নড়াইলের জামায়াত নেতা শান্তি কমিটির সভাপতি মওলানা সোলায়মান এবং সেক্রেটারি হারুন মোক্তারের নেতৃত্বে শান্তিবাহিনী গঠিত হয়। এদের নির্দেশে কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকেই নবগঙ্গা নদীর উত্তর ও পূর্বাঞ্চাল হানাদার মুক্ত হয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর শরীফ খসরুজ্জামান, দবির উদ্দিন, ইউনুস আহমেদ, লুৎফর মাস্টার, আলী মিয়া, লুৎফর বিশ্বাসসহ কয়েকটি গ্রুপ একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে তিন দিক থেকে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করলে প্রচন্ড যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা নড়াইলে হানাদার বাহিনীর ঘাটির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ‍

৯ ডিসেম্বর রাতে বিজয়ের তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে কমান্ডার ফজলুর রহমান জিন্নাহ, আমির হোসেন, সাইদুর রহমান সেলিম,  উজির আলী, শরীফ হুমায়ুন কবীর, আ. হাই বিশ্বাসের নেতৃত্বে বর্তমান নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ চালালে পাল্টা আক্রমণে বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান শহীদ হন।

শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাংলোতে অবস্থানরত পাক মিলিটারিকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলে তারা অস্বীকার করেন। এ সময় মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা চতুদিক থেকে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ শুরু করলে পাক মিলিটারিরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। এখানে কয়েকজন পাক মিলিটারি নিহত হয় এবং অন্যদের আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।

শীতের রাতে প্রবল শীতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা সারা রাত শহরে বিজয় উল্লাস করতে থাকে। পরদিন ১০ ডিসেম্বর  নড়াইলকে পাক হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।