ঢাকা, রবিবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

শাহজালালের কার্গো ভিলেজের আগুন 

ভেতরে যাত্রীদের অপেক্ষা, বাইরে স্বজনদের

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:১১, অক্টোবর ১৮, ২০২৫
ভেতরে যাত্রীদের অপেক্ষা, বাইরে স্বজনদের

ঢাকা: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা।

আবার বিমানবন্দরের বাইরে বিদেশ থেকে দেশে আসা যাত্রীদের অপেক্ষায় উৎকণ্ঠাময় সময় কাটছে স্বজনদের।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনালের সামনে ও বাইরে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

এদিন দুপুর সোয়া ২টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো শাখায় (কার্গো ভিলেজে) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। এতে কার্গো শাখায় থাকা কোটি কোটি টাকার মালামাল পুড়ে যায়। প্রায় ৭ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট।

এদিকে আগুন লাগার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমান ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কিছু বিমানকে ডাইভার্ট করে চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরে পাঠানো হয়।

এতে বিদেশগামী যাত্রীরা ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়েছেন। ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে তাদের বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে কী করবেন, তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। অনেকে চাকরি হারানোর শঙ্কায়ও পড়েছেন কেউ কেউ।

অন্যদিকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরা যাত্রীদের নিতে বিমানবন্দরে আসা স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। তারাও দীর্ঘ সময় ধরে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় রয়েছেন। অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন। কখন স্বজন ফিরবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

সিঙ্গাপুর যেতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মিয়া পারভেজ। তিনি সিঙ্গাপুরে একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। রাত ১১টা ৫০ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। আগামী সোমবার (২০ অক্টোবর) তার কাজে যোগ দেওয়ার কথা।

মিয়া পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। এখন ফেরত যাচ্ছি। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিমানবন্দরে এসে দেখি আগুনের কারণে ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। পরিবারের যারা সঙ্গে এসেছিলেন তারা আমাকে বিমানবন্দরে দিয়ে চলে গেছেন। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। কখন আবার ফ্লাইট দেবে সেটাও বুঝতে পারছি না। সোমবার আমার কাজে যোগ দেওয়ার কথা। যদি সময়মতো যেতে না পারি কোম্পানি তাড়িয়ে দিতে পারে, পারমিট ক্যানসেল করতে পারে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে এসেছেন শ্যামল পাল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে করে দুবাই হয়ে তার বাহরাইন যাওয়ার কথা ছিল। অগ্নিকাণ্ডের কারণে তার ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে।

শ্যামল পাল বাংলানিউজকে বলেন, বাহরাইনে আমার একটি ব্যবসা রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গত ২ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছিলাম। কিন্তু এখন আটকে গেছি। যে এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেটেছিলাম, তারা আগামী ২৪ তারিখের একটি ফ্লাইটে টিকিট করে দিয়েছে। কষ্ট করে চাঁদপুর থেকে এসেছি। এখন আবার ফেরত যেতে হবে। তবে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, পরিবারের সঙ্গে আরও দুই দিন থাকার সুযোগ পেয়েছি।

এমিরেটসের একই ফ্লাইটে দুবাই হয়ে বাহরাইন যেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিমানবন্দরে এসেছেন সুজন। তবে বাহরাইনের টিকিট কাটায় তিনি পরবর্তী কোনো ফ্লাইটের টিকিট পাননি। এখন কী করবেন তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না।

সুজন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমার ফ্লাইট ছিল। সেটি বাতিল করে ৯টায় সময় দিয়েছে। পরে রাত ৩টায় সময় দিয়েছে। এখন আবার একটি বিমান কর্তৃপক্ষ একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলছে আগামীকাল সকাল ৯টায় একটি অফিসে যেতে। কিন্তু কোথায় সেই অফিস তা জানি না। একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। যদি সময় মতো যেতে না পারি, চাকরি চলে যেতে পারে। কোথায় যাব, কী করব-কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

এদিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের নিতে বিমানবন্দরের বাইরে স্বজনদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রীরা বিমানে থাকায় তারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছেন না। বিমানবন্দরের সামনে উৎকণ্ঠায় কাটছে তাদের সময়।

বিমানবন্দরের সামনে বাংলানিউজের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শিশির আহমেদের। দুবাই থেকে তার ভাই শাহেদ আহমেদকে বহনকারী ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল।

শিশির আহমেদ বলেন, আমি ভাইকে নিতে সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে এসেছি। দুই বছর পর ভাই আসছে। কিন্তু আগুনের কারণে নাকি তার ফ্লাইট আবার দুবাই ফেরত গেছে। এখন আবার সিলেট ফিরে যাব নাকি ঢাকায় থাকব বুঝতে পারছি না।

১৫ বছর বয়সী রাফিয়া মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বিমানবন্দরে এসেছেন দীর্ঘ বছর পর দুবাই থেকে দেশে ফেরত আসা বাবা জালাল হাওলাদারকে নিতে। সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে তার বাবাকে বহনকারী ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। এখন তারা আর জালাল হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

বিমানবন্দরের সামনে রাফিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মাদারিপুর থেকে এসেছি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষা করছি। এতদিন পর বাবা আসছে, সেই খুশিতে ছিলাম। কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে। কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে জানি না। কেউ কিছু বলতেও পারছে না।  

এদিকে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাত ৯টা ৬ মিনিটে ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট নিরাপদে অবতরণ করেছে।

এসসি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।