ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ এখন সবার নজরে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ এখন সবার নজরে

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা শহরে অবস্থিত সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। যার পূর্ব নাম ছিল সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী মহাবিদ্যালয়।

এই কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো ও নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ বছরও সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।  

এই সাফল্য এবারই প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি এমন সাফল্য অব্যাহত রেখেছে।  

এই কলেজ থেকে ২০১৬ সালে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান ৩৮ জন, ২০১৭ সালে ২৯ জন, ২০১৮ সালে ৩৬ জন, ২০১৯ সালে ৩৮ জন, ২০২০ সালে ৪০ জন এবং ২০২১ সালে ৪০ জন।

সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের এই সাফল্যের নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সুদক্ষ মনিটরিং, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর অভিভাবকদের সাধনাই প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক সাফল্যের কারণ।  
 
অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক আরও বলেন, নিয়মিত উপস্থিতির বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা প্রতি দুই মাস পর পরীক্ষা নিয়ে থাকি। এই পরীক্ষায় কেউ খারাপ করলে তার বাড়তি কেয়ার নেওয়া হয়। ক্লাসের সময়ের বাইরেও তাকে সময় দেন শিক্ষকরা। এখানে শিক্ষার্থীদের ওপর জোর করে পড়াশোনা চাপিয়ে দেওয়া হয় না; বরং পড়াশোনা যেন শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দদায়ক হয়, সেদিকে বেশি নজর দেওয়া হয়।  

তিনি বলেন, অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। অভিভাবকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হয়।  

অধ্যক্ষ আহমেদ ফারুক বলেন, আমরা প্রতিটি পরীক্ষার আগে অভিভাবকদের সঙ্গে বাধ্যতামূলক একটি বৈঠকের আয়োজন করি। ওই বৈঠকে অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে কীভাবে যত্ন নিতে হবে, শিক্ষার্থীদের খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনা, শিক্ষার্থীদের শাসন করে নয়, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বমূলক আচরণ করার পরামর্শ দেই।  

এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময় বুয়েটেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ২০১৬ সালে বুয়েটে ভর্তি হন ৬ জন, ২০১৭ সালে ৯ জন, ২০১৮ সালে ১১ জন, ২০১৯ সালে ৬ জন, ২০২০ সালে ১৫ জন, ২০২১ সালে ১৮ জন এবং ২০২২ সালে ১৬ জন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন। সর্বশেষ ২০২২ সালে ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পান ৩১ জন। এছাড়া প্রকৌশল গুচ্ছে (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) ২০২০ সালে ভর্তি হন ৩৪ জন, ২০২১ সালে ৩৮ জন এবং ২০২২ সালে ৩৫ জন।  

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা, ব্যতিক্রমী পাঠদান কৌশল আর অভিভাবকদের ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার কারণেই প্রতিবছর মেডিকেল, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্যের প্রমাণ রেখে চলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।  

কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে একটি সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত করে নাম দেওয়া হয় সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল কলেজ। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নামকরণ করে। কলেজটিতে কেবল বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।  

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে লোকবল সংকট রয়েছে। ৭৬টি পদের বিপরীতে বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৪৮ জন। গণিত, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক, লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। প্রতিবছর মেডিকেল কলেজে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলেও প্রায় ছয় বছর ধরে জীববিজ্ঞান বিষয়ে প্রদর্শকের পদটি শূন্য।  
এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম বলেন, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ শুধু সৈয়দপুরে নয়, সারা দেশে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভালো ফলের জন্য এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য সারা দেশের ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতা করে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকটসহ অন্য যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োজনে জাতীয় সংসদে তিনি আলোচনা করবেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী পরিদর্শন করেছেন। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি তাঁর নজরে রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।