ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

হুমায়ূনের চিত্রকর্ম আত্মসাৎ: দু’জনকে আদালতের সমন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
হুমায়ূনের চিত্রকর্ম আত্মসাৎ: দু’জনকে আদালতের সমন

ঢাকা: হুমায়ূন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রতারণামূলকভাবে আত্মসাতের মামলায় দু’জনকে আদালতে হাজির হতে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন।

আগামী ২৫ অক্টোবর তাদের আদালতে হাজির হতে হবে।

সমন জারি হওয়া দুজন হলেন- রুমা চৌধুরী ও তার স্বামী মঞ্জুরুল আজিম পলাশ।

২০২১ সালের ২৯ জুন প্রয়াত হ‌ুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মামলাটি তদন্তের পর সম্প্রতি অভিযোগের সত্যতা মিলেছে মর্মে পিবিআই আদালত প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য আমেরিকার নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে তিনি ছেলে নিষাদকে নিয়ে বেশ কিছু ছবি এঁকেছিলেন। ওই সময়ে রুমা চৌধুরী ও তার সাবেক স্বামী বই ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সেই সূত্রে হুমায়ূন আহমেদ তার আঁকা ২৪টি ছবি তাদেরকে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে দেন। যেগুলো ২০১২ সালের জুন মাসে ফেরত দেওয়ার শর্তে রুমা চৌধুরী জিম্মায় দেওয়া হয়।

প্রদর্শনীর দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিকভাবে ছবিগুলো বিক্রি করে কমিশন নেওয়া এবং পরবর্তীতে ছবিগুলো আত্মসাৎ করা। এভাবে তারা বারবার হ‌ুমায়ূন আহমেদকে প্রস্তাব দিলেও তিনি তাতে রাজি হননি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছবিগুলো তিনি এঁকেছেন তার নিজের এবং ছেলে নিষাদের আনন্দের জন্য, বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য নয়। এ সময়ে রুমা চৌধুরী গুজব রটান প্রদর্শনীর ২৪টি ছবির মধ্যে ৪টি ছবি হারিয়ে গেছে।

আর্জিতে আরও বলা হয়, হ‌ুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর শাওন দেশে ফিরে আসেন। তিনি রুমা চৌধুরী ও বিশ্বজিৎ সাহার কাছে ছবিগুলো ফেরত চান। বারবার চাওয়া সত্ত্বেও তারা ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে অভিনেতা ও তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তির সহায়তায় হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের জিম্মায় তারা ২০টি ছবি ফেরত দেন। এ ঘটনা ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। পরবর্তীতে রুমা চৌধুরীর সঙ্গে বিশ্বজিৎ সাহার বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তিনি কুমিল্লার মঞ্জুরুল আজিম পলাশকে বিয়ে করেন।

২০১৫ সালে রুমা কুমিল্লায় চলে আসেন পলাশের সঙ্গে বসবাসের উদ্দেশ্যে। মঞ্জুরুল আজিম পলাশ গত বছর ৩১ মার্চ তার ফেসবুকে কুমিল্লায় লিংকবাংলা শিল্প প্রদর্শনীর বিজ্ঞাপন দেন। ১ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে একটি ছবি হ‌ুমায়ূন  আহমেদের আঁকা ছিল। যে ছবিটি হুমায়ূন আহমেদের আঁকা হারিয়ে যাওয়া চারটি ছবির একটি বলে প্রতীয়মান হয়। এর দ্বারা প্রমাণ হয় রুমা চৌধুরীর যোগসাজশে মঞ্জুরুল আজিম পলাশ ছবিগুলো অসাধুভাবে আত্মসাৎ করেছেন।

আর্জিতে আরও বলা হয়, আত্মসাৎ করা হ‌ুমায়ূন আহমেদের অঙ্কিত ছবিগুলোর মূল্য শৈল্পিক বা আর্থিক নিক্তিতে পরিমাপ করা সম্ভব না। যা হ‌ুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষদিনগুলোতে তার সঙ্গে ছেলের নিষাদের কাটানো সময়ের স্মৃতি বিজড়িত। আসামিদের কাছ থেকে ছবিগুলো উদ্ধার করা না গেলে তা বেহাত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে শুধু প্রয়াত হ‌ুমায়ূন আহমেদের পরিবারই নয়, সর্বোপরি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে মামলায় বলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২
কেআই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।