ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘বিশ্বজিৎ হত্যায় সমাজ কলঙ্কিত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৭
‘বিশ্বজিৎ হত্যায় সমাজ কলঙ্কিত’ বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ড

ঢাকা: পুরান ঢাকার চাঞ্চল্যকর টেইলার্স শ্রমিক বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘হামলা যারা করেছেন, তারা একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। বিশ্বজিৎ যে হামলার শিকার হয়েছেন, এতে সমাজ কলঙ্কিত হয়েছে’।

রোববার (০৬ আগস্ট) এ রায় দেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান বলেন, ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়, আবাসিক হলের রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা এবং তদন্তে গাফিলতি নিয়ে পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

আদালত বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি, হরতাল-অবরোধের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিশ্বজিৎকে রক্তাক্ত জখম করেন। মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধের ক্ষেত্রে আহ্বানকারী পক্ষ ও বিরোধী পক্ষকে গণতন্ত্র রক্ষা ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেন মানুষের জীবন বিপন্ন না হয় বা বিপন্নের আশঙ্কা না থাকে। জনসাধারণের শান্তি ভঙ্গ না হয় বা সম্পত্তির ক্ষতি সাধন না হয়’।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্বজি‍ৎ কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না। নিরীহ এ ব্যক্তি নিরস্ত্র ছিলেন। আবার অনিরাপদ ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। এ হামলা যারা করেছেন, তারা একটি কাণ্ডজ্ঞানহীন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। বিশ্বজিৎ যে হামলার শিকার হয়েছেন, এতে সমাজ কলঙ্কিত হয়েছে’।

‘ছাত্রনেতারা কখনো কখনো মিছিলে লোক বাড়াতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন, মিছিলে যেতে বাধ্য করছেন। হলে সিট দেওয়ার নামে ছাত্রদের দলে ভেড়াচ্ছেন। এরপর বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এ কারণে ছাত্র রাজনীতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে’।

‘এ অবস্থায় জাতীয় রাজনীতিবিদদের সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন’ মনে করে হাইকোর্ট বলেন,  ‘ছাত্র রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলের সিট বাণিজ্য, নকল করতে না দেওয়া, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার মতো কলঙ্কিত ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ উদ্বেগজনক সহিংসতা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না’।

আদালত বলেন, ‘আজ অস্ত্র ও মাদক ছাত্রদের ওপর প্রভাব ফেলছে। কখনো কখনো তাদের হিংস্র করে তুলছে। যারা এগুলো করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন মুষ্টিমেয় কিছু রাজনৈতিক নেতা। তারা মনে করেন, এসব কাজে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ হবে’।

রায়ে দু’জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ২১ আসামির মধ্যে চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। পলাতক বাকি ১১ আসামি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।

বিচারিক আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া ৮ জনের মধ্যে রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজন পলাতক। অন্য ছয়জনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন ও মীর মোহাম্মদ নূরে আলম লিমনের সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। লিমন পলাতক থাকলেও অন্য তিনজন কারাগারে আছেন।

খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম সাইফুল ও কাইয়ূম মিয়া টিপু বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। আর গোলাম মোস্তফা মোস্তফা ও এ এইচ এম কিবরিয়াকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যে ১১ আসামির বিষয়ে হাইকোর্ট কোনো মন্তব্য করেননি, তারা হলেন- খন্দকার মো. ইউনুস আলী ইউনুস, তারিক বিন জহুর তমাল, মো. আলাউদ্দিন, মো. ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন ইমরান, আজিজুর রহমান আজিজ, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন মোশাররফ।

মরদেহের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘তদন্তে গাফিলতি সমাজকে বিপন্ন করতে পারে।   এ জাতীয় চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্তে ত্রুটি আরেকটি অপরাধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে’।

গণমাধ্যমের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্র আমলে নিয়েই বিচারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের এসব চিত্র অবশ্যই বিচারার্থে গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে গণমাধ্যমের প্রশংসাও করেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭
ইএস/এএসআর

** বিশ্বজিৎ হত্যায় ২ জনের ফাঁসি বহাল, ৪ জনের যাবজ্জীবন
** বিশ্বজিতের সুরতহাল ও ময়না তদন্তকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।