ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

ইসলাম

নক্ষত্রের রহস্যে কোরআনের বার্তা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:০৮, অক্টোবর ২০, ২০২৫
নক্ষত্রের রহস্যে কোরআনের বার্তা

কোরআনুল কারিমের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা : আনআম, আয়াত : ৯৭

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে 

وَ هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوۡمَ لِتَهۡتَدُوۡا بِهَا فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۹۷﴾

সরল অনুবাদ

(৯৭) আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তা দিয়ে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ পাও। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছেন।

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

সুরা আনআমের ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে, সূর্য ও চন্দ্র ছাড়া অন্যান্য নক্ষত্রও আল্লাহ্ তাআলার অপরিসীম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এগুলো সৃষ্টি করার পিছনে যে হাজারো রহস্য রয়েছে, তন্মধ্যে একটি এই যে, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় রাত্রির অন্ধকারে যখন দিক নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ এসব নক্ষত্রের সাহায্যে পথ ঠিক করে নিতে পারে।
(আত তাফসিরুল মুয়াসসার)

ইবনু কাসীর (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: ‘আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে তাঁর নিয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আকাশে নক্ষত্রসমূহ সৃষ্টি করেছেন যেন মানুষ স্থল ও জলপথে দিকনির্দেশ পায়। নক্ষত্রগুলো শুধু দিকনির্দেশের জন্যই নয়, বরং আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও শয়তানদের ওপর নিক্ষেপের উপকরণ হিসেবেও সৃষ্টি করা হয়েছে। ” 

তিনি আরও বলেন:

‘প্রাচীন যুগে যাত্রী ও নাবিকেরা নক্ষত্রের অবস্থান দেখেই দিক নির্ধারণ করতেন।
যেমন—উত্তর তারকা (নজমুশ-শামাল) দ্বারা উত্তর-দক্ষিণ জানা যেত। এটি আল্লাহর এক বিশাল নিয়ামত ও প্রজ্ঞার নিদর্শন। ’

ইমাম তাবারী (রহ.) বলেন: ‘আল্লাহর বাণীর অর্থ হলো — তিনি আকাশে নক্ষত্রসমূহ স্থাপন করেছেন যাতে মানুষ এর মাধ্যমে দিকনির্দেশ পেতে পারে। যেমন নাবিকরা সমুদ্রে এবং মরুভূমির যাত্রীরা রাতে দিক নির্ধারণ করেন।
এ আয়াতে আল্লাহর সৃষ্ট জ্ঞানের নিদর্শন রয়েছে, যা জ্ঞানীদের চিন্তাকে আহ্বান জানায়। ’ তিনি আরো বলেন: “النجوم (নক্ষত্র) তিন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছে —

    আকাশের শোভা হিসেবে,
    শয়তানদের ওপর রিজম (নিক্ষেপ) হিসেবে,
    স্থল ও সমুদ্রে দিকনির্দেশের উপকরণ হিসেবে। ” (তাফসীর আত-তাবারী, ১১/৩০৪)

অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, আজ বৈজ্ঞানিক কলকব্জার যুগেও মানুষ নক্ষত্রপুঞ্জের পথ প্রদর্শনের প্রতি অমুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতেও মানুষকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, এসব নক্ষত্রও কোনো একজন নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিচরণ করছে। এরা স্বীয় অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও কর্মে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়।
যারা শুধু এদের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে এবং নির্মাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, তারা অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং আত্মপ্রবঞ্চিত।

আয়াতের শেষাংশে বলা হচ্ছে যে, আমি শক্তির প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি বিজ্ঞজনদের জন্য। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে চিনে না, তারা বেখবর ও অচেতন। কোন নিদর্শনই তাদের কাজে লাগে না। নবীদের বর্ণনাও তাদের কোনো সন্দেহ দূর করতে পারে না। তাদের কাছে এসব বর্ণনা যত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবেই আসুক না কেন, তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। (আত-তাফসিরুস সা’দী)

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।