ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানের পারমাণবিক দুর্গ ফোর্দো, ভাঙতে লাগবে যে ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৪৩, জুন ১৭, ২০২৫
ইরানের পারমাণবিক দুর্গ ফোর্দো, ভাঙতে লাগবে যে ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ জিবিইউ-৫৭এ/বি বোমা

ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করা। হামলায় নাতানজ, ইসফাহান ও ফরদোর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাকে নিশানা করা হয়।

স্যাটেলাইট চিত্র ও বিশ্লেষকদের মতে, অন্তত দুটি স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। তবে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর অনেক অংশ গভীর ভূগর্ভে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনো পরিষ্কার নয়। বিমান হামলায় ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।  

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক স্থাপনা গুলোতে এখন পর্যন্ত যে হামলা হয়েছে তাতে ইরানের ক্ষতি সমান্যই, তাছাড়া যদি ফোর্দোর মত ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র সচল থাকে, তাহলে ইসরায়েলের আক্রমণ ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির পথকে খুব কমই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স পেনেট্রেটর’ বা এমওপি নামের একটি বিশাল বাঙ্কার-ধ্বংসকারী বোমা আবারো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স পেনেট্রেটর

‘ম্যাসিভ অর্ডিনেন্স পেনেট্রেটর’ বা এমওপি বোমা মূলত এমন সুরক্ষিত ও গভীর লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য তৈরি, যেগুলো প্রচলিত অস্ত্রের আওতার বাইরে। এই বোমা গুলোই মূলত বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা হিসেবে পরিচিত।  

২০০০ সালে ইরান যখন তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ভূগর্ভস্থ স্থানে স্থানান্তর করে, তখনই যুক্তরাষ্ট্র এই বোমা তৈরির উদ্যোগ নেয়। প্রায় ১৫ টন ওজনের এই জিবিইউ-৫৭এ/বি বোমাটি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এবং এর আগে ব্যবহৃত জিবিইউ-২৮ বা জিবিইউ-৩৭-এর তুলনায় অনেক বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে।
 
এমওপি মূলত স্টেলথ বোমারু বিমান যেমন  বি-২ স্পিরিট এবং ভবিষ্যতের বি-২১ রেইডারে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই বোমার ডিজাইন করেছে বোয়িং এবং পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল এয়ার ফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরি।

২০০৭ সালে, নর্থরপ গ্রুম্যান একটি ২৫ লাখ ডলারের চুক্তির আওতায় বি-২ বোমারু বিমানগুলোকে পুনর্গঠনের কাজ করে, যাতে প্রতিটি বিমান দুটি এমওপি বোমা বহনে সক্ষম হয়। মার্চ ২০০৭-এ প্রথম বিস্ফোরণ পরীক্ষা হয় নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জে।  

এই বোমার মজুত এবং ব্যবহারের সক্ষমতা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে।  

বৈরুতের বাঙ্কারে নাসরাল্লাহকে হত্যা 

গত বছর দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়েহ উপশহরে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর এক ভয়াবহ হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যা করে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, মাটির প্রায় ৬০ ফুট নিচে নির্মিত রক্ষিত ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে এই হামলা চালানো হয়।

বিমান হামলাটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর এফ-১৫আই জঙ্গি বিমানের মাধ্যমে প্রায় ১০০টির মতো বিস্ফোরক ফেলা হয়। হামলার পর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী প্রাকাশিত ভিডিওতে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইসরায়েলি ফাইটার জেটে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ব্লু-১০৯ বোমা ছিল।  যার  ওজন প্রায় ১টন। যা বিশেষভাবে ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ধ্বংসের জন্য তৈরি। যেগুলোতে যুক্ত ছিল জেডিএএম গাইডেন্স কিট।

ডিফেন্স অ্যালটারনেটিভস প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, একটি ১টন ওজনের বাঙ্কার-ধ্বংসকারী বোমা প্রায় ১১৫ ফুট পর্যন্ত গভীরে ধ্বংসের ক্ষমতা রাখে।

ইরানের পারমাণবিক দুর্গ ফোর্দো

ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট  হলো ইরানের একটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক স্থাপনা, যা কোম শহরের কাছে একটি পর্বতের ভেতরে গভীরভাবে খনন করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি তেহরান থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

প্রথমে এটি ছিল ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইরজিসি) একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, পরে এটি রূপান্তরিত হয় একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে। নাতানজের পর ফোর্দো হলো ইরানের দ্বিতীয় পাইলট এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট এবং এটি সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ ধারণা করা হয় এটি মাটির প্রায় ৯০ মিটার নিচে অবস্থিত।

ইরান বহু বছর ধরে এই স্থাপনাটিকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা কাঠামো দিয়ে সুরক্ষিত করে রেখেছে, যার ফলে ইসরায়েল বহুবার পারমাণবিক কর্মসূচি লক্ষ্য করে হামলা চালালেও ফোর্দো তুলনামূলকভাবে অক্ষত রয়েছে।

তেহরান নিশ্চিত করেছে যে এই কেন্দ্রটি বিমান হামলার মতো আক্রমণেও টিকে থাকতে সক্ষম, যা একে অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর তুলনায় অনেক কঠিন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।