ঢাকা, রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুন ২০২৫, ১৮ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

দুবাইয়ে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বাজেনি অ্যালার্ম, বাসিন্দারা বলছেন, ‘আমরা মারা যেতে পারতাম’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৭, জুন ১৪, ২০২৫
দুবাইয়ে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে বাজেনি অ্যালার্ম, বাসিন্দারা বলছেন, ‘আমরা মারা যেতে পারতাম’

শুক্রবার গভীর রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের মেরিনায় একটি ৬৭তলা আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। কিন্তু বাজেনি অগ্নিনির্বাপক ফায়ার অ্যালার্ম।

ভবন কর্তৃপক্ষও বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিক কোনে নির্দেশনা দেয়নি। বন্ধুদের ফোনকলে বাসিন্দারা আগুন লাগার বিষয়টি জানতে পারেন।

এমন সব অভিযোগ এনে ওই ভবনের বাসিন্দারা বলছেন, ‘আমরা মারা যেতে পারতাম। ’

সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস বলছে, শুরুতে আগুন লাগার বিষয়টি বুঝতে পারেননি ওই ভবনের বাসিন্দারা। কারণ, অগ্নিনির্বাপক অ্যালার্ম বাজেনি, পোড়া গন্ধও অনুভূত হয়নি। এমনকি ধোঁয়াও চোখে পড়েনি কারও। অনেকেই তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন, ভবনে আগুন লেগেছে।  

আগুন লাগার ঘটনা জানাজানি হওয়ার মধ্যেই ঘন ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় ভবনের সিঁড়ি। নেই সিঁড়ি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। যার ফলে ভবন ছাড়তে লিফটের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। এতে লিফট পেতেও বেগ পেতে হয়।  

ভুক্তভোগী একজন বাসিন্দা বলেন, ‘রাত পৌনে ১০টার দিকে আমরা তার পোড়ার মতো গন্ধ পেতে শুরু করি, তখন আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ২৪তম তলায় ছিলাম। আমরা রান্নাঘরসহ অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখলাম, কিন্তু কিছু পুড়ছে বলে খুঁজে পাইনি। কিন্তু যখন আমরা বারান্দায় পা রাখলাম, তখন দেখলাম দমকলকর্মীরা আসছে এবং বাইরে লোকজন জড়ো হচ্ছে। ঠিক তখনই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসা এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পাই যে, আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। যে কারণে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।  

তিনি বিস্ময়ের সুরে বলেন, এতো কিছুর পরও কোনো অ্যালার্ম ছিল না, কোনো অফিসিয়াল নোটিশ ছিল না। আমরা যখন ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের ফোন করেছিলাম, কেবল তখনই তারা আমাদের ভবন থেকে নেমে যেতে বলেছিল।  

তিনি উল্লেখ করেন, ‘ধোঁয়ার কারণে আমার স্ত্রী মাথা ঘোরাচ্ছিলেন। হোটেল বুক করার আগে আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষা করেছিলাম। পরে, আমরা ওপরের তলায় আগুন দেখতে পাই। এটি ছিল ভয়াবহ। ’

আগুন লাগার পর ওই বহুতল ভবনের শত শত বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। এ সময় ওই ভবনের অনেক বাসিন্দা বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কেউ কেউ কাছাকাছি হোটেলগুলোতে বা বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা পুরো রাত বাইরে কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

নিরাপত্তার খাতিরে আগুন লাগা ভবনের আশপাশের ভবনও খালি করতে নির্দেশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। পাশের ভবনের আহমেদ খালিজ টাইমসকে বলেন, ‘আমি ম্যাগ ২১৮ এর ১৬ তলার বাসিন্দা। আমাদেরকে খুব ভোরে সরে যেতে বলা হয়েছিল। ভোরে আমার করিডোরে ধোঁয়া ঢুকে পড়ে, তাই আমি একটি ছোট ব্যাগ গুছিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসি। এখন আমি কাছাকাছি এক বন্ধুর বাড়িতে থাকছি। এই অগ্নিকাণ্ডে শুধু আগুন লাগা ভবন নয়; গোটা এলাকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’

বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেছেন যে, তারা আগুনের কথা জানতেন না এবং ভবনের জরুরি ব্যবস্থাও তাদের নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

২৮ তলার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘এক ঘণ্টা পরেও আমাদের এক বন্ধু আমাকে বার্তা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা জানতাম না যে আগুন লেগেছে। আমার স্ত্রী এবং আমি প্রায় বেরিয়ে আসতে পারিনি। জরুরি সিঁড়ি ধোঁয়ায় পূর্ণ ছিল। আমাদের লিফট ব্যবহার করতে হয়েছিল। আমরা যখন লবিতে পৌঁছালাম, তখন এটিও ধোঁয়ায় পূর্ণ ছিল। যদি লোকেরা চিৎকার করে আমাদের সঠিক দিকে নির্দেশ না করত, তাহলে আমরা মারা যেতে পারতাম।

এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।