ঢাকা, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

পাহাড়ে ধানক্ষেত ছুঁয়ে যে পথের নাম নিউজিল্যান্ড

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩৮, জুন ৭, ২০২৫
পাহাড়ে ধানক্ষেত ছুঁয়ে যে পথের নাম নিউজিল্যান্ড

খাগড়াছড়ি: চারদিকে পাহাড়ের আলিঙ্গন, দুই পাশে সবুজ কিংবা কখনো হলদে হয়ে যাওয়া ধানক্ষেতের মায়া। মাঝখান দিয়ে এগিয়ে চলেছে এক আঁকাবাঁকা পথ— যার নাম নিউজিল্যান্ড।

এই ল্যান্ডে যেতে লাগে না পাসপোর্ট বা ভিসা।

খাগড়াছড়ি শহরের আনন্দনগর ও তেতুলতলা পাড়ার মাঝামাঝি অবস্থিত এই ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’ কেবল একটি স্থান নয়, এটি স্থানীয়দের হৃদয়ের এক টুকরো সুখস্মৃতি। নব্বই দশক থেকে শুরু করে আজকের প্রজন্ম পর্যন্ত যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অবিচ্ছেদ্য এক আবেগ।

২০১০ সালে এই জায়গাকে ঘিরেই খাগড়াছড়ির স্থানীয় শিল্পী জনি সেন রুবেল তৈরি করেন একটি জনপ্রিয় গান। ‘চারপাশে সুদূরে পাহাড়ে ঘেরা, দু পাশে সবুজ ধানক্ষেত…’। গানটির সুর আর কথায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল নিউজিল্যান্ডের সৌন্দর্য ও প্রেম।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দূরের আলুটিলা পাহাড়ে গা মেলানো ধানক্ষেত, খোলা প্রকৃতি আর সড়কঘেঁষা দৃশ্য দেখে প্রথম কেউ এই জায়গার নাম দেয় নিউজিল্যান্ড। নামটি যে কতটা মিশে গেছে জীবনের সঙ্গে, তা বোঝা যায় সন্ধ্যাবেলায়; যখন তরুণ-তরুণীদের আড্ডা আর পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা মানুষের ভিড়ে জমে উঠে পুরো এলাকা।

রোদ, কুয়াশা আর বৃষ্টির আলতো পরশে ‘নিউজিল্যান্ড’ হয়ে ওঠে রঙিন
বর্ষায় পাহাড় ছুঁয়ে নামে বৃষ্টি, শীতে ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে। আর প্রতিদিন বিকেল হলেই যেন ছোটখাটো উৎসবে পরিণত হয় এই সড়কটি। নবারুন চাকমা, স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, নিউজিল্যান্ড এখনো খোলামেলা আছে। ধানক্ষেত আর দূরের পাহাড় দেখে মানুষ ঘুরতে আসে। বিকালে এত মানুষ হয় যে রাস্তা দিয়ে হাঁটাও মুশকিল!

কয়েক বছর আগে সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে কিছুটা নির্জনতা দেখা দিলেও, সম্প্রতি সংস্কারের পর তা আবারও ফিরে পেয়েছে আগের প্রাণচাঞ্চল্য।

খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন, আল আমিন, উশাপ্রু ও জ্যাক নুরন্নবী জানালেন, তারা মাসের বেশিরভাগ সময় জায়গাটিতে আসেন। শুধু তারাই নন, আসেন আরও অনেকেই। এটা তাদের বিকালের ঠিকানা।

শিল্পী জনি সেন রুবেল স্মৃতিচারণ করে বলেন, একটা সময় ছিল যখন জন্মদিন, কনসার্ট, আবৃত্তি— সব হতো এই সড়কে। মানুষের এত ভিড় হতো যে সাইকেলও ঠেলতে হতো হাতে করে। এখন চারপাশে কিছু ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে, তবু এই জায়গার জৌলুস এখনো আগের মতোই আছে।

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে একখণ্ড গ্রামীণ মোহনীয়তা যেখানে শহুরে ক্লান্তি পেরিয়ে মন পেতে চায় প্রশান্তির ছোঁয়া— সেইখানেই দাঁড়িয়ে খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’। ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই যেখানে কাটানো যায় অবসরের সেরা সময়গুলো।

আর তাই, সময় পেলেই একবার ঘুরে আসুন এই নিউজিল্যান্ড থেকে— যেখানে বাস্তব স্বপ্নের মতো ধরা দেয়।

এডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।