ঢাকা, শনিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

বাড়ি ফিরতে রিকশাচালকের ২০০ কিমি পথ পাড়ি, পাশে সেনাবাহিনী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৩৫, জুন ৭, ২০২৫
বাড়ি ফিরতে রিকশাচালকের ২০০ কিমি পথ পাড়ি, পাশে সেনাবাহিনী

বগুড়া: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, নয় কোনো রেকর্ড গড়ার জন্য লক্ষ্য, ঢাকা থেকে বাইসাইকেলে করে ২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার এই গল্পটা এক অসহায় বাবার আত্মত্যাগের।

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের রিকশাচালক বাবা রাজু তার ছেলে রেজওয়ান ইসলাম যেন মানুষ হয়, লেখাপড়া করে জীবন গড়ে তোলে এই স্বপ্নে বিভোর।

সেই স্বপ্ন পূরণে ছেলের জন্য একটি বাইসাইকেল খুব প্রয়োজন ছিল। নিজের কষ্টার্জিত আয়ে পুরোনো একটি সাইকেল কিনলেও, সেটি ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার মতো অর্থ ছিল না তার হাতে।

ঢাকার মহাখালীতে প্রায় দেড় দশক ধরে রিকশাচালান রাজু। তার ছেলে রেজওয়ান মাধ্যমিক পাস করে এখন কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত এক মাস আগে মহাখালী থেকে এক হাজার ৫শ টাকায় একটি পুরোনো সাইকেল কিনেন তিনি। কিন্তু সেটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরার জন্য বাস ভাড়াসহ দরকার ছিল তিন হাজার টাকা। রাজুর হাতে ছিল মোট আড়াই হাজার টাকা। এর মধ্যে ঈদের খরচও চালাতে হবে।

অবশেষ বাবার ভালোবাসাই তাকে সাহস জুগিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর ৫টায় বাইসাইকেল নিয়ে মহাখালী থেকে রওনা হন গাইবান্ধার উদ্দেশে। প্রায় ২১ ঘণ্টা বাইসাইকেল চালিয়ে পৌঁছান বগুড়ায়। মধ্যরাতে মহাসড়কে একা বাইসাইকেল চালাতে দেখে তাকে আটকায় সেনাবাহিনীর একটি তল্লাশি চৌকি। রাজুর অভাবের কথা ও ছেলের জন্য তার প্রচেষ্টা শুনে সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন দায়িত্বরত সেনাসদস্যরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজুর সাইকেলসহ তাকে একটি ট্রাকে তুলে দেন এবং কিছু শুকনো খাবার দিয়ে বাড়ির পথে সহায়তা করেন।

রাজু জানান, কোনো উপায় না পেয়ে একটি ব্যাগ নিয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে রওনা হই। পথে তিনবার ৫০ টাকা করে ভ্যানে করে কিছু দূর গিয়েছি। যমুনা সেতুতে বাইসাইকেল নিয়ে উঠতে দিচ্ছিল না, পরে ১শ টাকা দিয়ে একটি মিনি ট্রাকে উঠি। কিন্তু ট্রাকটি গাইবান্ধা পর্যন্ত না যাওয়ায় নামিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, এভাবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারবো ভাবিনি। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি। তবে ছেলের জন্য বাইসাইকেল উপহার দিতে পারায় আমি খুশি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা না থাকলে হয়তো বাড়ি পৌঁছানোই হতো না। এখন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারছি, ওনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।