সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক তালুকদারকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও ২১ সদস্যের অনুমোদিত কমিটিতে ১৮ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা দল সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার প্যাডে কামারখন্দ উপজেলা শাখার অনুমোদন দেন জেলা শাখার আহ্বায়ক এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান দুলাল।
কমিটিতে এনামুল হক তালুকদারকে সভাপতি এবং আব্দুল গফুর সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও সাবেক বন কর্মকর্তা আলী কবির হায়দারসহ ১৮ জন আওয়ামী লীগ সমর্থককে বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে।
তবে এদের মধ্যে অনেকেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন।
এদিকে নতুন কমিটি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৮ মে) সরেজমিনে কামারখন্দের মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ঝাটিবেলাই গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বিভিন্ন সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সর্বশেষ কমিটিতেও তিনি সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। এনামুল হক সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত আমলা কবির আনোয়ারের আত্মীয়। কবির বিন আনোয়ারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি কাজ নিয়েছেন তিনি। এমন একজন আওয়ামী দোসরকে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি করায় ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে তারই ছোট ভাই এমদাদুল হক রঞ্জুকে করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা দলের অর্থ সম্পাদক। তিনিও ভদ্রঘাট
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর সরকারকে। তিনিও স্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়াও সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব, আব্দুর রহমান সরকারও আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। তৃতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে আলী কবির হায়দারকে। যিনি সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্নার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও বন বিভাগের কর্মরত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
কমিটিতে পদ পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য করা হয়েছে।
কমিটির আরেক সদস্য রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আমাকে এই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আমি থাকতে চাই না, দয়া করে বাদ দিয়ে দিন।
কমিটির সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আলী কবির হায়দার বলেন, আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপি করি না। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর ওপর আমার কয়েকটি বইও লেখা আছে, মুক্তিযুদ্ধের ওপরও বই লেখা আছে। মুন্না সাহেব আমাদের এমপি ছিলেন,তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আমি মুক্তিযোদ্ধার স্বার্থটা দেখি। ওরা একটা কমিটি করেছে, আমি বলেছি যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ আছে, সেখানে আমি আছি।
এনামুল হক আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও আব্দুল গফুরও আওয়ামী লীগ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে নতুন কমিটির সভাপতি এনামুল হক রঞ্জুর মোবাইলফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর সরকার নিজে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করে বলেন, সভাপতি রঞ্জু সাহেব ঠিকাদারি কাজে পঞ্চগড়ে আছেন। তিনি আসার পর এ বিষয়ে কথা বলব।
কামারখন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাতে রাব্বী উথান অভিযোগ করে বলেন, এই কমিটির মধ্যে মাত্র তিনজন বিএনপি সমর্থক। আর সবাই আওয়ামী লীগের। আমরা জেলা কমিটির আহ্বায়কের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। তখন আমরা বলেছিলাম, জানেন না তাহলে কমিটি ভেঙে দেন। কিন্তু কমিটি এখনো ভেঙে দেননি। আমাদের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভাইকে বিষয়টি জানাব।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান ফেরদৌস বলেন, আওয়ামী লীগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি করা হয়েছে। তারাই যদি কমিটিতে থাকে, তাহলে আন্দোলন করে লাভ কী হলো?
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজিজুর রহমান দুলাল বলেন, কমিটি অনুমোদনের পর জেনেছি এর ৯০ শতাংশই আওয়ামী লীগ। অনুমোদিত কমিটি তো সহজে বাতিল করা যায় না। তবে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসএএইচ