সিরাজগঞ্জ: মনোয়ারা বেগম, বয়স ৬৫ বছর। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করেন।
মনোয়ারা বেগম জানান, তার জীবদ্দশায় ১৪ বার ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানে নিঃস্ব। এবার ভাঙলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবেন সেটা ভেবেই কুল পাচ্ছেন না তিনি।
মনোয়ারা বেগমের মতো ধীতপুর গ্রামের অসংখ্য মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ওই গ্রামের বৃদ্ধ কালু মোল্লা বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে এ গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ ভাঙা দিয়েছে। ভাঙনে বাড়িঘর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সব হারিয়ে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করছি। এ চরের জমিতে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাসকলাই, বাঙ্গি, সবজি, ধনিয়াসহ সব ধরনের ফসলের ভালো ফলন হয়। এসব ফসল ফলিয়ে ভালোই দিন কাটছিল আমাদের। কিন্তু এসব জমি আর বাড়িটিও ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো, কী খাবো- তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
ফজর আলী ব্যাপারি নামে এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে সবশেষ হয়ে গেলেও সরকার কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আমরা যুবক থেকে বুড়ো হয়ে গেছি, ভাঙন রোধে শুধুই আশ্বাস পেয়েছি, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় তিন মাস ধরে শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী, কৈজুরি ও গালা তিনটি ইউনিয়নের অন্তত নয়টি গ্রামে যমুনার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙছে যমুনা বেষ্টিত সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর ও কুরসি গ্রাম। এছাড়া একই ইউনিয়নের মাকড়া, বারপাখিয়া, বড় চানতারা, বানতিয়ার, কৈজুরি ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রামে ভাঙন চলছে। নদী ভাঙনে এসব গ্রামের ফসলি জমি, বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কুরসি গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে গরুর হাট, মসজিদ, মাদরাসা, বাড়িঘর, ফসলি জমি সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।
কথা হয়, ধীতপুর রোজিনা খাতুন, আব্দুর রহমান, আবু বক্কারসহ একাধিক কৃষকের সঙ্গে।
তারা বলেন, সোনাতনী ইউনিয়নের মাটি সোনার মতোই উর্বর। এখানে যে ফসলই বোনা যায়, ব্যাপক ফলন হয়। কিন্তু নদীভাঙনে একে একে সব জমিই হারিয়ে যাচ্ছে। চরের মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
তারা বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত পাঁচ/ছয়টি গ্রামের প্রায় তিন/চারশ বাড়িঘর যমুনা নদীতে চলে গেছে। ভাঙন রোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান ভাঙনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শাহজাদপুরের সোনাতনী ইউনিয়নসহ চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামে যমুনার তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, চরাঞ্চলে ভাঙন রোধে আমাদের কিছু করার নেই। তবে চরাঞ্চলের উন্নয়নে একটি প্রকল্প চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্র্রকল্পটি চালু হলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এসআই