ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যানবাহন

সাজিদুর রহমান রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৯, মে ১১, ২০২৫
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবাধে চলছে অবৈধ যানবাহন

মানিকগঞ্জ: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লক্করঝক্কর মার্কা রোড পারমিট বিহীন বাস, ট্রাক চলছে অবাধে।

আর মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তিন চাকার যানবাহনগুলো (অটোরিকশা, ইজিবাইক) মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

জেলার ওপর দিয়ে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়ক গিয়ে শেষ হয়েছে পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট এলাকায়। এ মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার খানেক যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের বৈধতা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মহাসড়ক সংলগ্ন হাইওয়ে পুলিশের একটি থানা ও ফাঁড়ি থাকলেও কার্যত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত সেলফি পরিবহন ও পদ্মা লাইন নামে দুটি পরিবহন চলাচল করে। সেলফি পরিবহনের নামে রোড পারমিট রয়েছে ৬৪টি বাসের। কিন্তু এর বিপরীতে চলাচল করছে দুই শতাধিক গাড়ি। পদ্মা লাইনের বাস চলাচল করছে ১৫টির মতো।  

অপর দিকে চিটাগং রোড থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত চলাচল করে নীলাচল পরিবহন। এ পরিবহনের রোড পারমিট রয়েছে ৪৭টি। কিন্তু এর বিপরীতে বর্তমানে চলাচল করছে ৭০ থেকে ৮০টির মতো গাড়ি।

এছাড়া গুলিস্তান থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত শুভযাত্রা পরিবহনের রোড পারমিট রয়েছে ৬৩টি। কিন্তু চলাচল করছে ৪০টির মতো গাড়ি। জেলা থেকে উপজেলাগুলোতে চলাচলের জন্য ৭৩টি গাড়ির রোড পারমিটের বিপরীতে প্রতিদিন চলাচল করে ৪০ থেকে ৪২টি গাড়ি।

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানী লাগোয়া জেলা মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে চলা যানবাহনগুলোর অধিকাংশের হয় রোড পামরিট নেই, নয়তো নেই চালকের লাইসেন্স। নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যানারসহ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে চলছে অবৈধ যানবাহনগুলো। অন্য দিকে ফিটনেস না থাকা গাড়িগুলো ব্যবহার হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য। বিআরটিএ’র দেওয়া ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, আবার অনেক চালকেরও লাইসেন্স নেই। তারপরও কীভাবে যানবাহনগুলো মহাসড়কে চলছে, তা নিয়ে বিস্মিত সচেতন মহল।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, সব কিছু ম্যানেজ করেই মহাসড়কে চলছে অবৈধ যানবাহনগুলো।  

অপরদিকে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সেগুলো বাস-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। ব্যস্ততম কীভাবে এগুলো চলাচল করছে, তা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে জেলাবাসীর অভিযোগ, কোনো না কোনো অদৃশ্য সুবিধার কারণেই এসব গাড়ি চলতে পারছে।  

অন্যদিকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর দাবি, হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ’র নজরদারির অভাবেই অবাধে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন।  

নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বাসের  মালিক, চালক ও অটোরিকশার চালক বলেন, মহাসড়কে চলাচলের জন্য রোড পারমিট একটা ফরমালিটি মাত্র, সব চলাচল করতে পারবে, যদি সঠিক জায়গা ম্যানেজ করা যায়। যেমন পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিবহনের জন্য যেসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো মহাসড়কে দেখলেই মনে হবে এ বুঝি খাদে পড়ে যাচ্ছে। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ওঠাই নিষেধ, কিন্তু সেখানে দেখা যায়, হরহামেশাই সেগুলো চলছে। কয়টা গাড়ির আপডেট কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স রয়েছে? তবুও সব চলছে, কীভাবে চলছে, তা বুঝে নিতে হবে।

সেলফি পরিবহনের পাটুরিয়া ঘাট পয়েন্টের লাইনম্যান সুলতান মিয়া বলেন, আমাদের দুই শতাধিক গাড়ি রয়েছে মহাসড়কে চলাচলের জন্য। তবে গড়ে প্রতিদিন একশ বা তার বেশি চলাচল করে।  

কতগুলো গাড়ি চলাচলের অনুমতি আছে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

নীলাচল পরিবহনের রোড ইনচার্জ মহিবুর রহমান সুমন বলেন, আমার জানা মতে, সব গাড়ির রোড পারমিট রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নীলাচল পরিবহনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরও ভালো বলতে পারবে।  

জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক লিটন বলেন, আমার মানিকগঞ্জ জেলায় (আঞ্চলিক রোড) যতগুলো গাড়ি চলাচল করছে, তার সবগুলোর রোড পারমিট আছে।  

সব গাড়ির ফিটনেস এবং চালকদের লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব গাড়িরই রোড পারমিট আর ফিটনেস রয়েছে। তবে দুই-একটি গাড়ির চালকের হয়তো লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। যাদের নেই, আমরা তাদের লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য জোর তাদিগ দিচ্ছি।

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয় বিমল রায় বলেন, আমার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছে। মহাসড়কে যদি দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে তিন চাকার গাড়ি চলে, তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে যানবাহনের ফিটনেসটা জরুরি। ঠিক একইভাবে দক্ষ চালক প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা হয় অদক্ষ চালক, আনফিট যানবাহন এবং তিন চাকার গাড়ির কারণে। আমি আশা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলো এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াবে।  

বরঙ্গাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি আমার এরিয়ায় যাতে কোনো অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সেজন্য প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। গত ছয় মাসে স্থানীয় প্রশাসন ও আমরা মহাসড়কে অভিযানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব খাতে জরিমানার প্রায় ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি। আর তিন চাকার (থ্রি হুইলার) যানবাহন চাইলেই রাতারাতি উচ্ছেদ করতে পারব না, তবে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছি, এ থ্রি হুইলার যারা চালান, তারা তো গরিব মানুষ, এটাও তো মাথায় রাখতে হয়।

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সোহেল সারোয়ার বলেন, মহাসড়কে যাতে কোনো কাগজপত্রবিহীন যানবাহন চলাচল করতে না পারে, সে জন্য প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হয়।  

তাহলে কীভাবে অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করি, তখন ওই সময়টাতে মহাসড়কে তারা চলাচল করছে।  

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মানিকগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক মাহবুব কামাল বলেন, আমরা সব সময় বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের মধ্যে থাকি। তবে রোড পারমিট ছাড়া কতোগুলো গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করছে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত রোড পারমিটবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবো।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।