ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

অলির বিস্ফোরক মন্তব্যে ঐক্যফ্রন্ট-২০ দলে তোলপাড়

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
অলির বিস্ফোরক মন্তব্যে ঐক্যফ্রন্ট-২০ দলে তোলপাড় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমদ, ফাইল ফটো

ঢাকা: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি, জামায়াত ও ২০ দলীয় জোট নিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির একাংশের সভাপতি ড. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) অলি আহমদ বীর বিক্রম বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তার এই মন্তব্য নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে তোলপাড় চলছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশি একজন আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিকের পরিচালিত দ্য গ্রিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ এমন অনেক বিষয় তুলে ধরেছেন, যা নিয়ে রীতি মতো চমকে উঠেছেন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ বলেছেন, ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট গঠন করা হয়েছিল, সেটা ছিল মূলত বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য। তাদের মিশন ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে চিরতরে ক্ষমতার বাইরে রাখা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিছু মেও মেও করা বিএনপি নেতা।

অলি বলেন, আমাকে যখন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি সরাসরি না করে দিয়েছিলাম। কারণ ড. কামাল হোসেন একজন নাম করা আইনজীবী। তার সঙ্গে আইন পেশা মানায়, রাজনীতি নয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন যেখানে সভা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, সেখানে জয় বাংলা বলে শুরু করেছেন, জয় বঙ্গবন্ধু বলে শেষ করেছেন। একটি বারও জিয়াউর রহমানের নাম এবং খালেদা জিয়ার নাম পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করেননি। এই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল মূলত বিএনপির সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য।

জামায়াত প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বলেন, বর্তমানে জামায়াতে ইসলামিতে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। এখন যারা নেতৃত্বে আছেন, তারা স্বাধীনতা বিরোধী নন, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। জামায়াতের শীর্ষ নেতারা যখন জীবিত ছিলেন, তখন বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করেনি। হঠাৎ করে বিএনপি কেন জামায়াতকে ছেড়ে দিচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়।

সাক্ষাৎকারে অলি আহমদ ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে যাদের দাওয়াত দেওয়া হয়, তাদের যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও কথা বলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি ২০ দলের কোনো মিটিংয়ে যাননি এবং শেষের কয়েকটি মিটিংয়ে এলডিপির কোনো প্রতিনিধি পাঠাননি বলেও জানান।

কেন পাঠাননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে বৈঠক হয়, তারা আমাদের সমকক্ষ নন বলে যাইনি। কাদের সঙ্গে বসে মিটিং করব। যেখানে খালেদা জিয়া নেই, সেখানে আমার যাওয়া সমীচীন নয়। আর পজিশন কী সেটা আমি নিজেই জানি না। আমাকে একবার বলা হলো ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক, একবার বলা হলো সমন্বয়ক। তারপরে কী আর জানতে পারিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, তার সঙ্গে যে ৩২ জন এমপি-মন্ত্রী বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের ২৮ জন মারা গেছেন।

যদিও এ বিষয়ে সম্প্রতি অলি আহমদের এলডিপি ছেড়ে এসে নতুন গঠন করা এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, অলি আহমদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি যাদের কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে এখনও বেঁচে আছেন।

এরা হলেন, আলমগীর কবির, জাহানারা বেগম, মনি স্বপন দেওয়ান, আবদুল করিম আব্বাসী, আবু ইউছুপ খলিলুর রহমান, এমএ জিন্নাহ, আবদুল গণি, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, মাহি বি চৌধুরী, মেজর অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মান্নান, আলী কদর, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। কিন্তু একমাত্র রেদোয়ান আহমেদ ছাড়া অলি আহমদের সঙ্গে তারা কেউ নেই।

এ বিষয়ে অলি আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি বলেছি তখনকার সংসদে (২০০১-২০০৬) যারা এমপি ছিলেন, যারা তখন বিএনপি ছেড়ে আমার দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ২৮ জন মারা গেছেন।

অলি আহমদের সাক্ষাৎকারের বক্তব্যের বিষয়ে ২০ দলীয় জোট নেতা লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ২০ দল আগের মতোই আছে। নিয়মিত বৈঠকও হয়। অলি আহমদ যা বলেছেন, সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তবে তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাকে জোটের প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছিল, এটা সঠিক নয়। জোটের কোনো বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত কখনও হয়নি। অবশ্য তিনি সিনিয়র হিসেবে নির্বাচনের আগে জোটের বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করতেন এবং মিডিয়ায় কথা বলতেন।

অলি আহমদের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তার এসব বক্তব্যের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি এসব বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি না।

অলি আহমদ অভিযোগ করেছেন, আপনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব মিটিংয়ে জয়বাংলা বলে বক্তব্য শুরু করেছেন আর জয় বঙ্গবন্ধু বলে শেষ করেছেন, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা তিনি সঠিক বলেছেন।

২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, আমি তার এ বক্তব্য এখনও শুনিনি। এটা না শুনে কিছু বলা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২০
এমএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।