ঢাকা: সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, নির্বাচনকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশিগগির সম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তামান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৪ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। একই দিনে আরও দুইটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তারপর আমরা আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। পরদিন আরও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।
বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনো চায় না উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিলাম বরাবরের মতই। আমরা লক্ষ্য করেছি ২৪ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতির কারণে এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ারবর্হিভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে’। আমরা বলতে চাই, যথাশিগগির একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।
দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার মোশাররফ।
তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতিশিগগির রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা অতি জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সব সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোনো কোনো মহল তাদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
‘জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সকল শ্রেণি-পেশার শক্তির মধ্যে যেন বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেজন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।
দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির এই নেতা।
টিএ/এইচএ/