ঢাকা, শনিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

আগে নির্বাচন, বিলম্ব করলে সংকট বাড়বে: আমীর খসরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৪, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫
আগে নির্বাচন, বিলম্ব করলে সংকট বাড়বে: আমীর খসরু বিআইআইএসএস অডিটোরিয়ামে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি : বাংলানিউজ

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে দেশগুলো দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছে, সেগুলোর অবস্থান ভালো। অন্যদিকে, যারা তর্ক-বিতর্ক ও বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, সেসব দেশে গৃহযুদ্ধ, সামাজিক বিভক্তি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে।

এই বিষয়টির ওপর জোর দিয়ে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগে নির্বাচন, বিলম্ব করলে সংকট বাড়বে। গত ১৫-১৬ বছর ধরে একটি প্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশ চালিয়েছে, যার কারণেই বাংলাদেশ আজ সংকটের মুখে। শেখ হাসিনার স্বৈরাচার পতনের ১৪ মাস পরেও কেন সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। এর কারণ ১৪ মাস পরেও বাংলাদেশ একটি প্রতিনিধিত্বহীন দেশ হিসেবে পরিচিত।

শনিবার (সেপ্টেম্বর ২৭) রমনায় বিআইআইএসএস অডিটোরিয়ামে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। সেমিনারে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমুখ।

সেমিনারে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম আলী রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাসুদ কামাল প্রমুখ।

সেমিনারে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে যে দেশগুলো দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছে, সে দেশগুলো ভালো আছে এবং ভালো করছে। আর যে দেশগুলো তর্ক-বিতর্ক এবং বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, সেসব দেশে গৃহযুদ্ধ, সামাজিক বিভক্তি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এটা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত।

আমীর খসরু বলেন, ১৪ মাস পরেও এখনো তর্ক-বিতর্ক চলছে। অথচ আমাদের পাশেই একটি দেশে বিপ্লব বা অভ্যুত্থান হওয়ার পর, দায়িত্ব নিয়ে প্রথম কাজ হিসেবে তারা একটি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে। অভ্যুত্থানকারীরাও যার যার কাজে ফিরে যাচ্ছেন। অন্য একজন (মান্না ভাই) বলেছেন যে শ্রীলঙ্কায় তারা কোনো সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে না, তারা নির্বাচনের কথা বলছে। সব দেশেরই চূড়ান্ত লক্ষ্য এটি। যখন একটি সরকার দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়, তার মূল কারণ হলো তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

গত ১৫-১৬ বছর ধরে একটি প্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশ চালিয়েছে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, এই কারণেই বাংলাদেশ আজ এই সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমরা সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, এই প্রতিনিধিত্বহীন অবস্থার কারণেই বাংলাদেশ আজ এখানে। ১৪ মাস পরেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্বহীন একটি দেশ হিসেবে পরিচিত। এখানে জনগণের কোনো প্রতিনিধি নেই। যখন আপনারা পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসা, বিনিয়োগ বা সাংবাদিকদের কথা বলেন, আমার কোনো প্রত্যাশা থাকে না। প্রত্যাশা নেই এই কারণে যে, এই সরকারের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। জনগণের সমর্থনে পুষ্ট একটি সরকারের যে রাজনৈতিক শক্তি থাকে, তা আজ ১৪ মাস ধরে অনুপস্থিত। গত ১৬ বছর ধরেও এটি অনুপস্থিত ছিল।

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এই ধারা থেকে পরিবর্তন আনতে হলে বাংলাদেশের মানুষের প্রথম প্রত্যাশা হলো তারা একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। তারা একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকার এবং সংসদ দেখতে চায়, যেই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহি করবে। বাংলাদেশে জবাবদিহিতা এবং দায়বদ্ধতার অভাবই মূল সমস্যা। যে সমস্ত দেশে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ ছিল, সেখানেও একই সমস্যা ছিল। কারণ তারা ছিল অনির্বাচিত সরকার। ক্রমান্বয়ে তারা স্বৈরাচারী হয়েছে, ক্রমান্বয়ে তারা ফ্যাসিস্ট হয়েছে। আমরা সেখান থেকে এখনো বের হতে পারছি না। প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনার স্বৈরাচার পতনের ১৪ মাস পরেও আমরা কেন এখনো এসব আলোচনা করছি? কেন সংস্কারের কথা বলছি?

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কার নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ঐক্যমত কমিশন হোক বা না হোক, সংস্কারে ঐক্যমত হোক বা না হোক, বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা নয় বছর আগে ‘ভিশন ২০৩০’র মাধ্যমে আমাদের সংস্কারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। পরবর্তীতে, ২৭ দফার মাধ্যমে বিএনপি কী কী সংস্কার করবে, তা আমরা জাতির কাছে ঘোষণা করেছি।

তিনি বলেন, তারও পরে, আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক ছিলেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে ২৭ দফাকে ৩১ দফা সংস্কারে নিয়ে গিয়েছি। এটা শেখ হাসিনার আমলের কথা বলছি, ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ের কথা নয়। তখন পর্যন্ত দেশের কোনো দল এমন বিস্তারিত সংস্কার কর্মসূচি জাতির সামনে আনেনি। আমরা দুই বছর আগে, শেখ হাসিনার আমলেই, আমাদের যুগপতের শরিকদের নিয়ে ৩১ দফা জাতির সামনে তুলে ধরেছি। সুতরাং সংস্কারের জন্য কমিশন হয়েছে, আমাদের আপত্তি নেই। আমরা তো অংশগ্রহণ করছি। ঐকমত্য কমিশন হোক আর না হোক, আমাদের ৩১ দফা সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন করব। এই কমিশনের এক্সারসাইজ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু প্রশ্ন হলো এই এক্সারসাইজের মাধ্যমে ১৪ মাস পরেও কেন আমাকে এখনো আলোচনা করতে হবে?

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ঐক্যমত যতটুকু হয়েছে, তা ভালো। কিন্তু ঐক্যমতের বাইরে গিয়ে আবার কেন এত আলোচনা করতে হচ্ছে? কেন পিআর নিয়ে আলোচনা করতে হবে? পিআর এ ক্ষমতা দিলে, ‘ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার’। আমরা জনগণের মালিকানার কথা বলেছি। যদি জনগণের মালিকানা হয়ে থাকে, তবে কয়টি দল টেবিলে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব এই দায়িত্ব জনগণ কোনো রাজনৈতিক দলকে বা বিএনপিকেও দেয়নি, অন্য কোনো দলকেও দেয়নি। আমরা একদিকে বলছি জনগণের মালিকানা, আবার আমরা নিজেরা বসে সবকিছু নির্ধারণ করতে বসেছি। আগামীর বাংলাদেশে কী কী সংস্কার দরকার, তা নিয়ে আমরা যদি ঐক্যমত হয়ে থাকি, এটাও তো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সহজ পথ হলো, যেটা আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ৩১ দফা করেছি। আমাদের বিষয়টি আমরা পরিষ্কার করে জনগণের কাছে নিয়ে গেছি এবং ৩১ দফা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে আবারো যাব। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে যে এক্সারসাইজ চলছে, তার মাধ্যমে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হচ্ছে কিনা, তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আমরা কি প্রতিনিয়ত জাতিকে বিভ্রান্ত করছি? আমরা কি কোনো কারণ ছাড়াই জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছি?

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খুবই পরিষ্কার কথা, প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, দর্শন ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা থাকবে। আপনি নিয়ে যান আগামী নির্বাচনের জনগণের কাছে। আপনি ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসুন, পাশ করুন। কিন্তু আপনি ঐকমত্য কমিশনের কথা বলে, এর মধ্যে অনেক এক্সারসাইজ করলেন, এখন আবার ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে নতুন নতুন দাবি নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করবেন? আমি প্রথমে যেটা বলেছি, যে সমস্ত দেশ অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে এই চক্রের মধ্যে পড়েছে, সেই সমস্ত দেশ আজ অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে। আমরা বাংলাদেশকে সেদিকে নিয়ে যেতে পারব না।

আগে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশে ফিরিয়ে আনি, যেটার অনুপস্থিতিতে আজকে বাংলাদেশে এই খারাপ অবস্থা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পর প্রত্যেকটি দলের অধিকার থাকবে, তারা সংসদের ভেতরে এবং বাইরে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের কাছে যেতে পারবে, জনমত সৃষ্টি করতে পারবে। এটাই তো গণতন্ত্র। জনমত সৃষ্টি করে আপনার দাবি প্রতিষ্ঠিত করুন। কিন্তু জনমত সৃষ্টি না করে যদি আপনি ঐকমত্যের কথা বলে অন্যান্য দাবি তুলে আজকে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন, তাহলে তো সেটা কাজ করবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা দলের উচিত জনগণের সঙ্গে তাদের আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানোর কথাগুলো বলা। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা বলেছি, ১৮ মাসে এক কোটি লোকের চাকরির ব্যবস্থা করব। আমরা এক কোটি লোকের চাকরি ১৮ মাসে কীভাবে দেব, সেই কাজগুলো, হোমওয়ার্ক করে, সবকিছু শেষ করে জনগণের সামনে তুলে ধরছি। কোন সেক্টরে কত চাকরি হবে, সেটাও আমরা তুলে ধরব। একটি কমপ্রিহেনসিভ পেপার নিয়ে জনগণের সামনে এক কোটি চাকরি আমরা কীভাবে দেব, তা তুলে ধরব।

আমীর খসরু বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং এই সেবা কীভাবে দেব, এর অর্থনৈতিক কার্যকারিতা কীভাবে নিশ্চিত করব, সেটাও আমরা হোমওয়ার্ক করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ঘটছে, সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের পুঁজিবাজার কী হবে, আর্থিক খাত কী হবে, আমাদের দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে হবে, এই কাজগুলোও আমরা করেছি এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীদারের সাথে দেশে-বিদেশে কাজ সম্পন্ন করেছি। ক্ষমতায় যদি জনগণ নির্বাচিত করে, তবে সেদিন থেকে কাজ শুরু করার ধৈর্য বাংলাদেশের মানুষের এখন নেই। আপনাকে কম সময়ের মধ্যে, ১০০ বা ১৮০ দিনের মধ্যে পারফর্ম করতে হলে আপনাকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের এই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ বলেন, বিএনপির স্লোগান হলো শুধু রাজনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করলে চলবে না, অর্থনীতিকেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতিতে যেভাবে লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং সমান প্রবেশাধিকার পাবে, অর্থনীতিতেও যেন সবাই সমান প্রবেশাধিকার পায়, সবার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকে। বাংলাদেশের উন্নয়নে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমি একটি সুইমিং কম্পিটিশন থেকে আসছি, যেখানে প্রচুর জনসমাগম ছিল। আমি সেখানে বললাম, স্পোর্টসকেও গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। স্পোর্টস যাতে কোনো গুটিকয়েক লোকের হাতে না থাকে। প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে গণতন্ত্র থাকতে হবে। শুধু ভোট নিয়ে সরকার গঠন করবেন, আর বাকি বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অধিকার থাকবে না, এই ধরনের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মানুষ চায় না। প্রতিটি সেক্টরকে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ করার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকতে হবে। আজকে বাংলাদেশের মানুষ তার নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য কী আছে তা জানতে চাচ্ছে। তার ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরি পাবে কিনা, ব্যবসা করতে পারবে কিনা, ঋণ কিছু মানুষের হাতে থাকবে নাকি সাধারণ মানুষের সকলের অধিকার থাকবে, এই বিষয়গুলো আজকের তরুণ প্রজন্মসহ সবার জন্য পরিষ্কার করা দরকার।

আমীর খসরু বলেন, আগামী বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলতে হবে। পুরো চক্রটি যদি গণতান্ত্রিক না হয়, তবে শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত সরকার হলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র কাজ করবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র তখনই কাজ করবে, যখন বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে পারবে, তারা অংশীদার হতে পারবে। সুতরাং আগামীর বাংলাদেশে আমরা এই বিষয়গুলোতে একটু জোর দেই। শুধুমাত্র বিভিন্ন প্রশ্ন এনে তর্ক-বিতর্ক ও বিভক্তি সৃষ্টি না করে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা ফিরিয়ে আনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পর প্রত্যেকে যাতে মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারে, সাংবাদিকরা যাতে কাজ করতে পারে, প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের কথাগুলো মুক্তভাবে বলতে পারে, সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এগুলোই মূল বিষয়। এগুলো বাদ দিয়ে আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং প্রশ্ন এনে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি।

সেমিনারে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ঐক্যমত কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সিদ্ধান্তে একমত হতে না পারায় সরকার এখনো অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তবে কোন বিষয়ে শতভাগ ঐক্যমত আসা সম্ভব না। এখানে সরকার কোন দায় নিতে চাচ্ছে না। তবে যেহেতু আপনারা সরকারে আছেন দায় আপনাদের নিতেই হবে। আর পাশাপাশি যখন আলোচনার টেবিলে পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে তখন রাজপথে এ নিয়ে আন্দোলন কতটা যৌক্তিক। যে সকল রাজনৈতিক দল এসব করছে তাদের এর জন্য দায় নিতে হবে। এরা কিন্তু শুরুর দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল।

তিনি বলেন, আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বৈষম্য করছে। কারণ জাতিসংঘের অধিবেশনে মাত্র তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যাওয়া হয়। কেন অভ্যুত্থানের সময় তো শুধু এই তিন দল ছিল না, অন্যান্য দলগুলোও ছিল। তাহলে হাসিনা যেখানে এত ব্যয়বহুল সফর করত, ড. ইউনূসও একই কাজ করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম শামীম রেজা বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার আগে যদি আমরা এই বলি যে পিআর বা সংস্কার কিভাবে হবে তাহলে নির্বাচন আরো বেশি জটিল হবে। পৃথিবীতে অনেক পদ্ধতির পিআর আছে। একেকটা একেক রকম। এর ভালো দিক হলো এর মাধ্যমে প্রতিটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি থাকতে পারে। অন্যদিকে আমাদের বিশ্বে যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে নেগোসিয়েশন পাওয়ার থাকতে হবে। যেমনটা নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ভারতের সঙ্গে করেছে। এর জন্য আপনার শক্তিশালী কাঠামো থাকতে হবে। আর বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশগুলো তখনই আপনাকে ভালো দেখবে, আপনি যত বেশি নিরপেক্ষ থাকবেন। আর নিরপেক্ষ থাকতে হলে আপনার শক্তিশালী কাঠামোর প্রয়োজন আছে।

প্রথম আলো যুগ্ম সম্পাদক ও কবি-প্রাবন্ধিক সোহরাব হোসেন বলেন, হাসিনার সময় গণমাধ্যম যেমন হয়রানি হতো জেল-জুলুমের মাধ্যমে, এখনো হয়রানি হচ্ছে কিন্তু অন্যভাবে। এ ছাড়া দেশ নানা মুখি সংকটে আছে। আজ এক সাক্ষাৎকারে ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে যদি নির্বাচন না হয় তাহলে সংকট আরো বাড়বে। তাই বলতে চাই, নির্বাচনকে যেন বিলম্বিত করে আমরা এই সংকটকে যেন আর না বাড়াই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা দুইটি বিষয়ে জোর দিয়েছি। এর একটি হচ্ছে সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যমত ও অন্যটি নির্বাচনের বিষয়ে। বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক দল আগাম প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মাধ্যমে পলিটিক্যাল মাইলেজ নিতে চাচ্ছে। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যদি এসব বাস্তবায়ন না করে তাহলে এটি হবে রাজনৈতিক পরাজয়।

তিনি বলেন, নিম্ন কক্ষের পিআরের কোনো বাস্তবতা নেই। তবে উচ্চ কক্ষের পিআর বিষয়ে আমরা অধিক আলোচনা করতে পারি।

ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ