ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বোয়ালমারীতে গণকবর-স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় ব্যক্তিগত স্থাপনা!

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
বোয়ালমারীতে গণকবর-স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় ব্যক্তিগত স্থাপনা!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার কলেজ রোডের গণকবর কেন্দ্রিক প্রস্তাবিত স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাজ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুই মাস বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে।  

প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে কাজ চলমান রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

ফলে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্থানীয় শহীদদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন আজ হুমকির মুখে।  

জানা যায়, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি ও তাদের দোসর রাজাকার আল বদর বাহিনী ছাত্রনেতা রেজাউলসহ শতাধিক মুক্তিকামী বাঙালিকে হত্যা করে সরকারি কলেজ সংলগ্ন ছনের ক্ষেতে মাটিচাপা দেয়। মূল বধ্যভূমির ওপর মালিকানা শর্তে বসতবাড়ি নির্মাণের সময় মাটির নিচ থেকে শহীদদের কঙ্কাল উঠে এলে বসতবাড়ির পাশেই তা পুনরায় সমাধিস্থ করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীকালে সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমানের উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।  

স্থানীয় প্রশাসন ২০২০ সালে পৌরসভার শিবপুর মৌজার ১২২৭ দাগের ৪৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে গণকবরটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। যাতে স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র স্থাপন করা যায়। কিন্তু দুই বছর আগে প্রস্তাবনা পাঠানো হলে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। গণকবরটি যে জায়গায় অবস্থিত সেই স্থানের জমির মালিকানা ছিলেন সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের ডেমোনেস্ট্রেটর মানিক শীলের নামে। পরে ওই জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি হওয়ায় সরু একটি সড়ক ও সামান্য কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি জমিটির মালিক উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় গ্রামের মো. খালিদ হাসান বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মুছে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

বোয়ালমারী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক চন্দনা’র সম্পাদক কাজী হাসান ফিরোজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বোয়ালমারীতে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রমাণ কলেজ রোডস্থ এই গণকবর বা বধ্যভূমি। যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এ গণকবরটি সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। ইতোপূর্বে মূল গণকবরের ওপর বসতবাড়ি, গণকবর ঘেঁষে শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে- যা লজ্জাজনক। বাড়ি নির্মাণের সময় খনন কাজে উঠে আসা শহীদদের হাড় কঙ্কাল পুনরায় মুক্তিযোদ্ধারা যেখানে সমাধিস্থ করেন, সেখানে গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে সেটিরও সংকোচন হলে শহীদদের বীরত্বগাথার ইতিহাস মুছে যাবে। এটা সংরক্ষণের জোর দাবি জানাই।  

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক আব্দুর রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বধ্যভূমির স্থানে স্মৃতিসৌধ স্থাপনের জন্য পুরো প্লট (৪৭ শতাংশ) অধিগ্রহণ করার জন্য ইউএনও কর্তৃক জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো আছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে জনৈক ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। বিষয়টি এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে দুই বছর আগে ভূমি অধিগ্রহণের জন্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। যে প্রকল্পের অধীনে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের কথা ছিল, প্রস্তাবনা পাঠানোর আগেই সে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় প্রকল্পের অনুমোদন দেয়নি।  

তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা নেই। মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত। এছাড়া কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা উপজেলা প্রশাসনের নেই। ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমরা ওই বাড়ি নির্মাতাকে অনুরোধ করেছি। তিনি আমাদের অনুরোধে নির্মাণ কাজ দুই মাসাধিক কাল বন্ধ রেখেছিলেন। বাড়ি নির্মাতার অভিযোগ প্রশাসনের কথা রাখতে গিয়ে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।  

ইউএনও বলেন, প্রকল্প পাস হলে স্থাপনার মালিকগণ স্থাপনা ভেঙে দিতে বাধ্য। তারপরেও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে একাধিকবার বুঝিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।