ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জানাজায় অংশ নিয়ে বাসায় ফিরে রাতে আত্মহত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২
জানাজায় অংশ নিয়ে বাসায় ফিরে রাতে আত্মহত্যা

ঢাকা: এক স্বজনের মৃত্যুর খবরে জানাজায় অংশ নিতে দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় যান চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খান। জানাজা শেষে সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বাসায় ফেরেন, এরপরই রাত ১০টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলায় ৫/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে আবু মহসিন খানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

যারা সেই সময় মহসিন খানের ফেসবুক লাইভটি দেখছিলেন তারাই পুলিশকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে খবর দেন। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশ বাসার ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসা অবস্থায় তার নিথর দেহ দেখতে পায়।

স্বজনরা জানান, ২০১৭ সালে ক্যানসার ধরা পরার পরই মানষিকভাবে ভেঙে পড়েন মহসিন খান। এছাড়া একা থাকার কারণে দিন দিন আরও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সম্প্রতি প্রায়ই ফেসবুকে নানা ধরনের বিষণ্নতামূলক পোস্টও দিতেন তিনি। এছাড়া ব্যবসার ক্ষতি ও বিভিন্ন জনের কাছে পাওনা টাকা ফেরত না পেয়েও হতাশ ছিলেন তিনি। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েই তিনি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা স্বজনদের।

আবু মহসিনের স্ত্রী শাহীন আক্তার বিউটি ও এক ছেলে আফ্রিদী খান নিশান থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়ে তিনা ও তার স্বামী চিত্রনায়ক রিয়াজের সঙ্গে থাকেন বনানীতে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরেই মহসিন ধানমন্ডির বাসায় একাকী জীবন-যাপন করছিলেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে লাইভেও তাকে বার বার একা থাকার কষ্টের কথা বলতে দেখা গেছে তাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহসিনের এক স্বজন বলেন, বুধবার দুপুরে মোহাম্মদপুরে এক স্বজনের জানাজায় অংশ নিতে যান মহসিন। সেখান থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই সম্ভবতো আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। কারণ তিনি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন, ‘দরজা না ভেঙেই খোলা যাবে এমন একটি লেখাও ছিল দরজার বাইরে। সবগুলো লেখাই ছিল কম্পিউটারে টাইপ করা। এমনকি তিনি কাফনের কাপড়টাও পাশে রেখে আত্মহত্যা করেছেন।

তিনি বলেন, মহসিন ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগছিলেন বুঝা যাচ্ছিল। কিন্তু এছাড়া তার কোনো অর্থকষ্ট বা আত্মহত্যার অন্য কোনো কারণ আছে বলে আমার জানা নেই।

মহসিনের স্ত্রীর বোন পরিচয় দেওয়া এক নারী বলেন, কয়েকদিন ধরেই তিনি ফেসবুকে বেশকিছু ডিপ্রেশনমূলক পোস্ট দিয়েছেন। আমরা এসব বিষয় তার কাছ থেকে জানতে চাইতাম, আমরা উনাকে বলতাম আপনিতো একা নন। আপনার মেয়ে বনানীতে আর স্ত্রী ও ছেলে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে, তাদের ওখানে চলে যান। তখন তিনি আমাদের বলতেন, তোরা একা থাকার কষ্ট বুঝবি না।

ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মহসিনের পরিচিতদের মধ্যে যারা লাইভ দেখছিলেন তারাই পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, দরজায় কম্পিউটারে টাইপ করে একটি কাগজ টানিয়ে রাখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল ‘মামা, দরজা খোলা হাতলের হ্যান্ডেল চাপ দিয়ে ভেতরে ঢুক’। অর্থাৎ তিনি কাউকে উদ্দেশ্য করে বলতে চেয়েছেন দরজা খোলা আছে।

পুলিশ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ড্রয়িং রুমে চেয়ারে বসা অবস্থায় মরদেহটি দেখতে পায়। মাথার ডানপাশে গুলিবিদ্ধ ও অস্ত্রটি নিচে পড়ে ছিল। সামনেই ছিল তার অস্ত্রের লাইসেন্স ও হাতে লেখা নোট।

মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ‘ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ’

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মহসিন খান ২০১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই ফ্ল্যাটে একা বসবাস করে আসছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে একাকী বসবাস, ব্যবসায় ক্ষতিসহ বিভিন্ন কারণে তিনি জীবনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় বাসায় তিনি একাই অবস্থান করছিলেন। আর এ সময় বাইরের কেউ বাসায় ঢুকেছে প্রাথমিকভাবে আমরা এসব বিষয়ের কোনো কিছু পাইনি। ভবনের প্রতিটি জায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে, আমরা সেগুলো চেক করেছি। ঘটনার পরপরই আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মাসুম বাংলানিউজকে জানান, এ বিষয়ে নিহত মহসিনের  স্বজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলবে। প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হবে। পরিবার যদি চায়, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করবে, তাহলে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২২
পিএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।