ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কাঁঠালের আকৃতি ‘অসুন্দর’ হয় যে কারণে 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
কাঁঠালের আকৃতি ‘অসুন্দর’ হয় যে কারণে  গাছে শোভা পাচ্ছে নানা আকৃত্রির কাঁঠাল, ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: চারদিকে চলছে কাঁঠালের ভরা মৌসুম। হাঁটবাজার, পথেঘাট বা আধুনিক ফলের দোকানগুলোতে কাঁঠালের ব্যাপক সমারোহ।

নানা সাইজের কাঁঠাল দখল করে রেখেছে ক্রেতার চাহিদা আর অর্থের যোগসূত্র। কাঁঠালপ্রিয় বাঙালির শরীরিক পুষ্টিচাহিদাও সম্পন্ন হচ্ছে এই ‘জাতীয় ফল’টির মাধ্যমে।  

উৎসুক কেউ কেউ সবান্ধবে কাঁঠাল খাবার খণ্ডউৎসবও পালন করে যাচ্ছেন। এমন দলগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ব্যাপক। অর্থাৎ নানাভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে পরিবারিক বা সবান্ধবে কাঁঠালের আয়োজন।  

তবে সব কাঁঠালই কিন্তু সুন্দর বা পরিপাটিভাবে সুসজ্জিত নয়। প্রকৃতিগতভাবে ওরা কিছুটা অসুন্দর বা আঁকাবাঁকা কিংবা এবরো-থেবরো। এর কারণইবা কী? কেন সবগুলো কাঁঠাল পরিপূর্ণভাবে সুসজ্জিত বা ঠিকমতো সেইপ (কাঠামো) হয় না।  

তুলনামূলকভাবে সুদৃশ্য আকৃতির ‘নিঁখুত’ কাঁঠাল যে শুধুই দেখতে সুন্দর তা নয়; খেতেও অপেক্ষাকৃত সুস্বাদু। আমাদের জাতীয় এই ফলের ইংরেজি নাম Jackfruit এবং বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমি নিজেও পর্যবেক্ষণ করছি কাঁঠালকে নিয়ে। কাঁঠালের সেইপ (কাঠামো) ঠিক মতো হচ্ছে না। কাঁঠাল এক ধরনের যৌগিক ফল। কাঁঠালের মেল, ফিমেল কিন্তু আলাদা। পাশেই একটি মুচি অর্থাৎ পুরুষ এর অবস্থান। কাঁঠালের ফুল যখন ফুটে তখন পলিনেশনের (পরাগয়ান) জন্য বাহক দরকার হয়। কাঁঠালের যে হাজারো ফুল তার সঙ্গে যদি পুরুষ মুচির স্পর্শ না হয় তবে কাঁঠাল পরিপূর্ণভাবে তৈরি হবে না। পুরুষ মুচির মাথায় হলুদ পাউডার জাতীয় উপাদান থাকে। কাঁঠাল যেটাতে হবে সেটাতে যদি হলুদ পাউডারের টাচ (স্পর্শ) না হয় তাহলে কিন্তু কোষ হবে না। যে কয়টা টাচ হবে সে কয়টাই হবে। বাকিগুলো অসম্পূর্ণভাবে তৈরি হবে অর্থাৎ বাঁকা, চিপা বা এবরো-থেবরো হয়ে যাবে।  

তিনি আরো বলেন, ‘এটা কারণ হচ্ছে হাজার হাজার কাঁঠালের যে যৌগিক ফুল ওইটা প্রত্যেকটার গর্ভমুণ্ডকে নিষিক্ত করতে হবে। যে কটা নিষিক্ত হয়, সে কটা কোষ হয়। যে কথা নিষিক্ত হয় না, সে কয়টায় কোষ হয় না। কাঁঠাল যেখান দিয়ে নিষিক্ত হয় না যেখান দিয়ে চেপ্টা হয়ে থাকে। কোনো কোষ হয় না।  

স্থানের কথা উল্লেখ করে এ উদ্ভিদ গবেষক বলেন, ঢাকা শহরে এখন দেখা যাচ্ছে কাঁঠাল গাছগুলোকে ব্যাপকভাবে কাঁঠালের বাঁকা বা এবরো-থেবরো সাইজ। তার মানে কী? কাঁঠাল যখন ফুটে যখন হয়তো বা বাতাস ছিল না। অথবা পিঁপড়া ছিল না। অথবা কীট-পতঙ্গ ছিল না। অথবা প্রজাপতি ছিল, মৌমাছি ছিল না। যেগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভিজিট করে এরা ছিল না। ফলে কাঁঠালের সব ফুল পরাগায়িত হয়নি। পরাগায়িত না হওয়াতে দেখা যাচ্ছে, যেখান দিয়ে পরায়ন হয়েছে যেখান দিয়েই কোষ তৈরি হয়েছে। যেখান দিয়ে হয়নি, সেটা বাঁকা বা এবরো-থেবরো হয়ে গেছে।  

পিঁপড়া, মৌমাছি, নানা কীট-পতঙ্গ এরা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে রোলপ্লে করে। একে ওপরের ওপর তাদের জীবনচক্রে নানাভাবে নির্ভরশীল। নির্ভলশলীতা না থাকলে এরা পৃথিবীতের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে না। প্রকৃতি এমন একটা জায়গা যেখানে সবাই সবার সঙ্গে ইন্টারকানেক্টেড (আন্তঃসূত্রেগাঁথা)। সেটা উদ্ভিদই হোক কিংবা প্রাণী।  

প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে ইন্টারকানেক্টেড। এই ইন্টারকানেকশনে (আন্তঃসংযোগে) যখন ডিসটারভেন্স (বাঁধা) অনুভূত হয় তখনই প্রকৃতিতে এলোমেলো দেখা দেয় বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।