ঢাকায় ফ্রান্সের জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) ঢাকার ফ্রান্স দূতাবাসে এ উপলক্ষে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুই।
ম্যারি মাসদুপুই বলেন, প্রতি বছর আপনাদের সবার সঙ্গে আমাদের জাতীয় দিবস উদযাপন করা সর্বদা আনন্দের। বিগত বছরের স্মৃতি ভাগ করে নেওয়ার এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর জন্য এটি একটি অসাধারণ উপলক্ষ্য। আপনারা জানেন, ২৩৬ বছর আগে প্যারিসের জনগণ বাস্তিল দখল করে, যা ছিল একটি রাজনৈতিক কারাগার এবং রাজতন্ত্রের প্রতীক। এটি তখন থেকে ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিতি পায়। বাংলাদেশে আপনারা একটি ঘৃণ্য শাসনের প্রতীক হিসেবে গণভবন দখল করেছেন। এখন প্রায় এক বছর হয়ে গেছে এবং আপনারা শিগগিরই ৫ আগস্ট এটি উদযাপন করবেন। আপনারা যে মূল্যবোধের জন্য লড়াই করছেন তা আমাদের পরিচিত।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, গণতন্ত্রের অর্থ স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও অন্তর্ভুক্তি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও সেই জটিল পথের ভিত্তিপ্রস্তর এবং অবশ্যই এগুলোকে ন্যায়বিচারের সঙ্গে চলতে হবে। ১৭৮৯ সাল থেকে ফ্রান্সে গণতন্ত্রের সুসংহতকরণে আমাদের প্রায় ১০০ বছর সময় লেগেছে। আমি নিশ্চিত যে আপনারা আমাদের চেয়ে অনেক দ্রুত এটি অর্জন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বিচক্ষণ এবং অসাধারণ নেতৃত্বে দেশ এখন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তাটি অনেক বাধার সঙ্গে প্রশস্ত। তবে সাহস এবং দৃঢ় সংকল্প নিঃসন্দেহে সেগুলো অপসারণ করতে সক্ষম হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগের চেয়েও বেশি বাংলাদেশি শিল্পীদের সমর্থন করে আসছি এবং সঙ্গীত, থিয়েটার, সিনেমা, ভিজ্যুয়াল আর্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফরাসি শিল্পীদের বাংলাদেশে নিয়ে আসছি। গত এপ্রিলে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ফ্রান্স বাংলাদেশ সপ্তাহটি ব্যাপক দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটি অসাধারণ সাফল্য ছিল। আপনাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আমাদের শিক্ষা সহযোগিতাও জোরদার হচ্ছে এবং আমরা ফ্রান্সে আরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আতিথ্য দেওয়ার জন্য উন্মুখ।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারকে সমর্থন করতেও প্রস্তুত। অভিবাসনের চাপ কমাতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি সংখ্যক অদক্ষ অবৈধ অভিবাসী আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। তাদের ভুল ভাবনা যে তারা সেখানে একটি স্বর্ণভূমি খুঁজে পাবে, কিন্তু বাস্তবে তারা জীবনের কঠোর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে একটি কৌশল তৈরি করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রধান লক্ষ্য হলো আপনাদের দেশকে আরও বেশি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে দেখা। এক্ষেত্রে আমি বিশেষভাবে আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, আগামী মাসগুলোতে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার জন্য কাজ করবো।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
টিআর/আরবি