ঢাকা : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি এবং গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এই তথ্য জানান। এতে অধ্যাপক ইউনূসের জাতিসংঘে সফরের নানা দিক তুলে ধরেন তিনি।
শফিকুল আলম জানান, নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ইউএনজিএ’র উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বক্তব্য দেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইউএনজিএ’র ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বৈশ্বিক মহলকে আশ্বস্ত করেন যে—বাংলাদেশ জনগণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
প্রেস সচিব আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছিলেন দেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয় প্রতিনিধি। শফিকুল বলেন, এটাই প্রথমবার, এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিদল একসঙ্গে আন্তর্জাতিক সফরে অংশ নেয়। তারা প্রবাসী কূটনীতিক, ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যা একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে-গোটা বাংলাদেশই এখন গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে ঐক্যবদ্ধ।
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো এবং ভুটানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়নের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়।
এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি, ইউনিসেফ নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা এবং আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও বৈঠক করেন।
তিনি আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নেন এবং সেখানে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভূমিকা তুলে ধরেন।
শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়।
জাতিসংঘ সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এ সংকট যেন বৈশ্বিক মনোযোগ থেকে হারিয়ে না যায়—সেজন্য বিশ্বকে সরব থাকতে হবে।
তিনি জানান, এসব বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মোট ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে।
প্রেস সচিব বলেন, জবাবদিহিতা ও উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের অগ্রগতির একটি স্বাধীন মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য। এ অনুরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রাপথে আন্তর্জাতিক আস্থা ও গঠনমূলক মূল্যায়নের প্রতি উন্মুক্ততা প্রকাশ পেয়েছে।
ইউএনজিএ সফরের আরেকটি বড় অর্জন ছিল নতুন শ্রমবাজারের সম্ভাবনা উন্মোচিত হওয়া। কসোভো, আলবেনিয়া এবং ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ব্যাপারে আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, এসব সুযোগ প্রবাসী আয় বাড়াতে সহায়ক হবে এবং নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করবে।
এমইউএম/এসআইএস