ঢাকা, রবিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি, ফলও সবার মেনে নেওয়া উচিত: মুনির সাতোরি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৩৮, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি, ফলও সবার মেনে নেওয়া উচিত: মুনির সাতোরি মুনির সাতোরি

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং এর ফলাফল সবাইকে সম্মান করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মুনির সাতোরি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ সফর শেষ করার আগে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

সাতোরি বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হতে হবে এবং নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। বাংলাদেশে নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতার জন্য এই শর্ত অপরিহার্য। ’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন কেবল একটি ধাপ মাত্র। সব রাজনৈতিক অংশীদাররা যেন ঐকমত্য তৈরি হওয়া সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ইসাবেল উইসেলার-লিমা (ইপিপি, লুক্সেমবার্গ), আরকাদিউস মুলারচিক (ইসিআর, পোল্যান্ড), উরমাস পায়েত (রিনিউ ইউরোপ, এস্তোনিয়া) এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা (গ্রিনস/ইএফএ, নেদারল্যান্ডস)।

সাতোরি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্টনারশিপ কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টে (পিসিএ) মানবাধিকার অঙ্গীকারের মান নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইইউর সমর্থন অব্যাহত থাকবে, তবে মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই হবে সহযোগিতা গভীর করার প্রধান মাপকাঠি।

আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে।

সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসন, মানবাধিকার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম মান বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং এসব বিষয়ে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করা।

মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, অতীতের দিকে ফিরে তাকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে ক্ষমতার বিভাজনকে সম্মান করা হয়নি, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, নাগরিক সমাজ বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও ছিল না। অথচ এসব বিষয় একটি সুস্থ গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার অপরিহার্য নিশ্চয়তা। ’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের পর নতুনভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে।

সাতোরি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইইউ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এক বছর পর এসে তাঁরা দেখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ ও পরিবর্তনে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে। প্রতিনিধিদল প্রত্যক্ষ করেছে, এই প্রক্রিয়া কিভাবে এগোচ্ছে এবং তারা কিভাবে বাংলাদেশকে আরো সমর্থন দিতে পারে, তার পর্যালোচনা করছে।

সফরকালে প্রতিনিধিদলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সুধীসমাজের সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গেও আলোচনা করেছে।

সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ার ফলাফল যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমর্থন পায়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন সর্বোত্তম শর্তে সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা  দেবে। ’

ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল এ সপ্তাহেই আসছে
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দল এ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের নতুন রাষ্ট্রদূত বোরিস ভ্যান বোমেল গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা জানান। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওই সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গতকাল শুক্রবার ওই সাক্ষাতের বিষয়টি জানায়।

প্রেস উইং জানিয়েছে, সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বাণিজ্য ও কৃষি এবং রোহিঙ্গাবিষয়ক মানবিক সংকটসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

রাষ্ট্রদূত বোমেল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য তাঁর দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ দল এ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছে এবং নেদারল্যান্ডস এ মিশনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে পানি ব্যবস্থাপনাও আলোচনায় আসে। অধ্যাপক ইউনূস স্মরণ করেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও উপকূলীয় নিম্নভূমি সুরক্ষায় ডাচ অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হয়েছে।

সূত্র: ইউএনবি

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।