ঢাকা, রবিবার, ৫ আশ্বিন ১৪৩২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতার ছবি ভাইরাল, নজরে আসেনি পুলিশের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:২০, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫
অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতার ছবি ভাইরাল, নজরে আসেনি পুলিশের অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত আপন

রাজশাহীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক ক্যাডারের পিস্তল হাতে থাকা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

তবে তিনি এখনও গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের দাবি, ছবিটি তাদের নজরে আসেনি।

যদিও গত কয়েক দিন ধরে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক ইয়াসির আরাফাত আপনের পিস্তল হাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

ইয়াসির আরাফাত আপন ছিলেন ২০২২ সালের ১১ মার্চ অনুমোদিত রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির নেতা। ওই কমিটির সভাপতি রকি কুমার ঘোষের বাহিনীর সবচেয়ে আস্থাভাজন অস্ত্রধারী ক্যাডার তিনি। এ ছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের পরের কমিটির নেতাদেরও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। রাজশাহীতে আপন ইয়াবা ব্যবসার ডিলার হিসেবেও পরিচিত। ব্যবহার করেন প্রাইভেটকার, দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল।

আপনের অস্ত্র হাতে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, কালো পাঞ্জাবি পরে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে হাতে পিস্তল নিয়ে সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন তিনি। একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোলা ওই ভাইরাল ছবিটি রাতের। এ সময় আশপাশে মানুষের উপস্থিতি ছিল না। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আপনের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আপনের এ ছবি সম্পর্কে অনেকেই বলছেন, এটি গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের আগের মুহূর্তের ছবি। শহরের আলুপট্টি মোড়ে গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার ওপর ভয়াবহ আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। হামলার সময় আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ওই হামলায় জুলাই আন্দোলনের পক্ষের দুইজন নিহত হন, আহত হন শতাধিক।

এদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ী শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে পঙ্গু হয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন। ওই হামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষের ক্যাডার আপন ছাড়াও তার বাহিনীর আরও কয়েকজন সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত আপনের বাড়ি শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপাড়া এলাকায়। এলাকাবাসী জানান, আপনের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। পাশাপাশি এ বাহিনীর অনেকের কাছেই অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও এ বাহিনীর সদস্যরা এখনও সক্রিয়। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় তাদের অবাধ বিচরণ। দামি ব্র্যান্ডের কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে তারা শহরজুড়ে মহড়া দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতার দাপটে রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন (সড়কপথ) ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়নের ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদটি দখল করেন আপন। আর এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা শাহ আলম, যিনি আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন দলীয় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলম। ছেলে আপনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

আপনের এলাকার এক বাসিন্দা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও আপন প্রকাশ্যে ছিলেন। সম্প্রতি ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে তিনি আত্মগোপনে যান। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারিধারায় আছেন বলে তারা জানেন। তিনি আরও বলেন, রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। আপন ও তার বাহিনীর আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার মানুষ।

আপনের এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী এমন একজন দুর্ধর্ষ ব্যক্তি ও তার বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি। পাশাপাশি তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা খোঁজ নেব। এ রকম ঘটনা ঘটলে অবশ্যই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ’

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।