বাংলাদেশের রাজনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কে জোরালো গুঞ্জন প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাজ্য আরাকানের স্বাধীনতা নিয়ে। আরাকান কি আসলে জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিবেচনায় পূর্ব তিমুরের মতো স্বাধীন হচ্ছে?
পূর্ব তিমুর ছিল ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ রাজ্য।
ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে তিমুরের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে পর্তুগিজরা। ওই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তারা সেখানে উপনিবেশে স্থাপন করে। ওলন্দাজদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ১৮৫৯ সালে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, পর্তুগাল দ্বীপের পশ্চিম অর্ধেকাংশ আলাদা করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান পূর্ব তিমুর দখল করে। কিন্তু জাপানের আত্মসমর্পণের পর আবারও সেখানে পর্তুগিজদের উপনিবেশ বহাল হয়।
১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর পর্তুগাল থেকে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে পূর্ব তিমুর। কিন্তু তার নয় দিন পরেই পূর্ব তিমুরকে আক্রমণ করে প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া। তখন দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী দুই-দশক ইন্দোনেশিয়া পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য অবকাঠামোগত বিনিয়োগের মাধ্যমে চেষ্টা চালালেও ব্যাপকভাবে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে সংঘাতে প্রায় এক লাখ ৮০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট জাতিসংঘ-প্রস্তাবিত গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয় পূর্ব তিমুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ান সামরিক বাহিনীর সমর্থনে স্বাধীনতাবিরোধী মিলিশিয়ারা ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। তারা প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন তিমোরিকে হত্যা করে এবং ৩ লাখ মানুষকে শরণার্থী হিসেবে পশ্চিম তিমুরের দিকে ঠেলে দেয়। ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফোর্স ফর ইস্ট তিমুর (ইন্টারফেট) মোতায়েন করার পর পর্যায়ক্রমে সহিংসতার অবসান ঘটে। সংকট সমাধানের জন্য ওই বছরের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন নিয়োগ করে। ২০০২ সালের ২০ মে পূর্ব তিমুর আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল এখন প্রায় শতভাগ আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে এ রাজ্য স্বাধীন হওয়ার প্রায় দ্বারপ্রান্তে। আরাকান আর্মির সদস্যরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা সেখানে মুসলিমমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সম্প্রতি ওই অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটা মুসলিমমুক্ত আরাকান প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চল ঘিরে ইহুদি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। এটা এখন বাস্তবতার খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা।
তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, আরাকান স্বাধীন হলে সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কি আরাকানে আবার ফিরে যাবে? না কি যেতে পারবে না। আর বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরমহলে দেশের লাভ-ক্ষতি ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ও কূটনীতির জোর খেলা চলছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো।
বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও করিডোরের বিষয়টি অসত্য নয় বলেও দাবি করেছেন বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি বলেছেন, বিষয়টি হাইলি সেনসেটিভ। তাই হয়তো সরকার এটা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারি বাংলানিউজকে বলেন, দু’দিন আগে কিংবা পরে আরাকানে নতুন একটি রাষ্ট্র হবেই। এ কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক আমেরিকা, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় বাংলাদেশ দিয়ে আরাকানে করিডোর হোক। যতটুকু মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরাও চান করিডোর হোক। কিন্তু ইন্ডিয়া এটা চায় না। এজন্য ইন্ডিয়া প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে উসকানি দিচ্ছে। জনমতে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
ওয়াকিবহাল সূত্রমতে, গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে পাশে বসিয়ে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইফতার করেন। সেখানের সমাবেশে ড. ইউনূসের আগামী বছর রমজানের ইফতার রোহিঙ্গাদের আরাকানে করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই রাজনীতি ও কূটনীতির ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো আরাকান রাজ্যের স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্ক্ষার বিষয়টির অনুমান করতে শুরু করে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এরপর হঠাৎ করেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মানবিক করিডোরের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানানোর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। বিএনপি, জামায়াত, বাম-ডানপন্থি সবাই এ ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট বিবৃতি ও বক্তব্য জানতে চায়। সবার মনেই প্রশ্ন, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাংলাদেশ কি তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার গেম চেঞ্জার হয়ে উঠছে? দক্ষিণ এশিয়ার বিষফোঁড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কি তাহলে অবশেষে মিয়ানমারের অঙ্গচ্ছেদ ঘটিয়েই করা হচ্ছে?
রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৮ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আর যুদ্ধ দেখতে চাই না। আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মানবিক করিডোর নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। ’
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চতর প্রতিনিধি ও দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের মিয়ানমারের আপত্তি সত্ত্বেও সরাসরি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। ড. খলিলের আরাকানের ‘নতুন প্রশাসনে’ রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির আহ্বান রাজনীতি বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের পাশে নতুন আরেকটি রাষ্ট্র আরাকানের অভ্যুদয়েরই পূর্বাভাস বলে ধারণা করছেন। নতুন প্রশাসন শব্দদ্বয়ের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রের বীজ রয়েছে বলেও ধারণা বিশ্লেষকদের।
অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, আসলে ইন্ডিয়া আমেরিকার সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্ক এককভাবে রাখতে চাইতো। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ইন্ডিয়া চায় আমেরিকা তাদের মাধ্যমে অন্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রাখুক। কিন্তু আমেরিকা যেহেতু অনেক কিছু দক্ষিণ এশিয়াতে ইতোমধ্যে ঘটিয়ে ফেলেছে, তাই আরাকান রাষ্ট্র হওয়াও সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেটা কম বেশি যে সময়ই লাগুক। মজার ব্যাপার হলো, আরাকান রাষ্ট্র হলে চীন সেখানে বাধা দেবে বলে মনে হয় না। আরাকান আর্মির সঙ্গে চীনেরও ভালো সম্পর্ক। সেখানকার বন্দরে চীনের বিনিয়োগ আছে। ওয়ান বেল্ট ইনিশিয়েটিভ রোডের নিরাপত্তার ব্যাপারও আছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার হয়তো রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নিয়ে এখন দেন-দরবার করছে। বিষয়টি সুরাহা হলেই মানবিক করিডোর বা চ্যানেল যে নামেই হোক, আরাকানের সঙ্গে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের সীমান্তের চ্যানেল খুলে দেওয়া হতে পারে।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা আরাকানের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অবশ্য বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
নেদারল্যান্ডে থাকা আরাকানের মংডুর সাবেক বাসিন্দা খায়রুল আলম বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের বাঙালি মনে করতো। আরাকান আর্মিও তাই মনে করে। আরাকান অঞ্চল এখন প্রায় শতভাগ আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। আরাকান আর্মির সদস্যরা অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা সেখানে মুসলিম মুক্ত রাষ্ট্র করতে চাচ্ছে। এজন্য সেখান থেকে তারা মুসলিম রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক তাড়িয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় দেড়লাখ নতুন রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটা মুসলিমমুক্ত আরাকান প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ।
খায়রুল আলমের মতে, আরাকান আর্মি, কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর অনেকের ক্যাম্প ভারতে। ধর্ম ও ভাষাগত সাদৃশ্য থাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে থাকা খ্রিস্টান, কুকি-চিন, বনি মানাসে সম্প্রদায়ের পরোক্ষ সাহায্যও তারা পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক নাগরিকত্ব ও প্রত্যাবাসন ছাড়া বাংলাদেশ আরাকান আর্মিকে সহায়তা করলে কিংবা জাতিসংঘের মাধ্যমে করিডোর বা চ্যানেলের সুযোগ করে দিলে আর কখনোই রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে পারবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আরাকান রাষ্ট্র হলে বাংলাদেশ কি লাভবান হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বাংলানিউজকে বলেন, আরাকান রাষ্ট্র হলে পূর্ব তিমুরের মতো রাষ্ট্র হবে। তবে এটা হবে বাফার স্টেট টাইপের। এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। কিন্তু বড় ব্যাপার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন। রোহিঙ্গারা একটু ভুল করেছিল। তারা মিথ্যা প্রলোভনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে সাহায্য করেছিল। এটাও রোহিঙ্গারা করেছিল পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পরামর্শে। তবে সে যাই হোক- ইউনূস সরকার রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরত পাঠাতে পারলেই বাংলাদেশের আসল সফলতা।
প্রতিবেশী ভারত কি মানবিক করিডোর কিংবা আরাকানে নতুন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. বেপারি বলেন, আসলে ভারতের সঙ্গেও আরাকান আর্মির সম্পর্ক রয়েছে। নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ওরা এটা করে। কিন্তু ভারতের মনে ভয়ও কাজ করছে। যদি মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের বিদ্রোহীরা উৎসাহিত হয়। যদি তারাও পৃথক রাষ্ট্র দাবি করে। এজন্য ভারত কখনোই আমেরিকা কিংবা চায়নার মদদপুষ্ট নতুন রাষ্ট্র তাদের পাশে চায় না। আমেরিকার সশরীরে দক্ষিণ এশিয়ায় উপস্থিতিও ভারতের জন্য উদ্বেগের।
আরাকান আর্মি কারা?
মেজর জেনারেল টুইয়ান মার্ট নিয়াংয়ের নেতৃত্বে মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে ২০০৯ সালে আরাকান আর্মি গঠিত হয়। জেনারেল নিয়াং একইসঙ্গে আরাকান আর্মির রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড লীগ অব আরাকানেরও প্রধান, যাদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
আরাকান অঞ্চলকে স্বাধীন করার ঘোষণা দিয়ে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করলেও শুরুতে চোরাগুপ্তা কিছু হামলার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমিত ছিল। ২০১৮ সালে আরাকানের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক সরকারের নির্যাতনের সময় সংগঠনটি ধীরে ধীরে আক্রমণের ব্যাপ্তি বাড়াতে থাকে। কিন্তু ২০২০ সালে মিয়ানমার সরকারের সাথে অস্ত্রবিরতি চুক্তির পর তাদের কার্যক্রম অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিল। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারির পর সংগঠনটি আবার সক্রিয় হয়। ২০২৩ সালের শেষ থেকে ২০২৫ সালের শুরুর মধ্যকার এই দেড় বছরে তারা বাংলাদেশ-মিয়ানমার পুরো সীমান্তসহ অধিকাংশ রাখাইন বা আরাকান রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। আরাকান আর্মি পুরো রাখাইনে ব্যাপক হামলা করলেও রহস্যজনকভাবে চীনের বিনিয়োগে সমৃদ্ধ ক্যুউকপুউ বন্দর ও শহরে আক্রমণ করেনি। এখন সংগঠনটি আরাকানে প্যারালাল সরকার চালাচ্ছে।
রাখাইন রাজ্য কোথায়?
৩৬ হাজার ৭৭৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মিয়ানমারের রাখাইন বা আরাকান দেশটির একদম পশ্চিমের উপকূলীয় প্রদেশ। এর উত্তরে চিন ও মগ অঞ্চল, পূর্বে বাগো প্রদেশ আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও পশ্চিমে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম। ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত আরাকান মিয়ানমারের সামরিক শাসনের অধীনে ১৯৮৯ সালে রাখাইন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রদেশটির রাজধানী সিত্তে, যা আকিয়াব নামে বেশি পরিচিত। মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৯৮৯ সালে রাখাইনের রাজধানীর নাম আকিয়াব পরিবর্তন করে সিত্তে নামকরণ করে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী অঞ্চলটির জনসংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। এছাড়া রাখাইন থেকে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের প্রধান জাতিগোষ্ঠী আরাকানিজ। এছাড়া রয়েছে চিন, ম্রো, কামি সম্প্রদায়, যাদের বেশিরভাগ বৌদ্ধ ও কিছু খ্রিস্টান। এছাড়া দ্বিতীয় প্রধান জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলিম।
রাখাইনের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী ক্যইয়ুপু অঞ্চলে চীনের বিপুল অর্থায়নে নির্মিত গভীর সমুদ্র বন্দর রয়েছে। ক্যইয়ুপু রাখাইনের কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ পথ ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এখান থেকেই চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গ্যাসের পাইপলাইন রয়েছে। এই অঞ্চলটিই চীনের ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ। এখানে চীন একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করেছে। ক্যইয়ুপু ছাড়াও রাখাইনের রাজধানী সিত্তে ও থান্ডেতেও বিমানবন্দর রয়েছে।
টিআইএম