ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

খাগড়াছড়িতে আমচাষিদের ‘দুশ্চিন্তা’ টোল-চাঁদায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
খাগড়াছড়িতে আমচাষিদের ‘দুশ্চিন্তা’ টোল-চাঁদায়

খাগড়াছড়ি: পাহাড়ের আমের খ্যাতি সারা দেশে। বিষ ও ফরমালিনবিহীন আম্রপালি ও রাঙ্গুইসহ নানা জাতের সুস্বাদু আম যাচ্ছে সারা দেশে।

এবার আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে আমের ফলন বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। এমন ধারণা কৃষি বিভাগের। তবে ফলন ভালো হলেও ফলচাষিদের দুশ্চিন্তা কমছে না।

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে পাহাড়ের আম সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হলো ‘চাঁদাবাজি’। চাষিদের অভিযোগ, আম পরিবহন করতে গিয়ে বিভিন্ন সংস্থা সড়কে অধিক টোলের নামে অধিক টাকা আদায় করছে। এক্ষেত্রে টোল ইজারাদারদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

ফলচাষিরা জানান, বিষ ও ফরমালিনবিহীন হওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন জাতের আম সারা দেশে বেশ সমাদৃত। এই কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা জেলায় এসে আম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। কিন্তু চাঁদা দিতে হয় বলে তারা এখান থেকে আম সংগ্রহ করতে চান না। এ ছাড়া কাঁঠাল ও কলাসহ অন্য ফলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র বলে জানা গেছে।

আম পরিবহনের সময় পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি পৌরসভা, রামগড় পৌরসভা ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার টোল ইজারাদাররা অতিরিক্ত হারে ট্যাক্স (টোল) আদায় করছেন। এ ছাড়া বাজার ইজারাদাররাও বাড়তি টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর একাধিক আঞ্চলিক দলের চাঁদা তো আছেই।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য ফলদ বাগান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সমির হোসেন সুজন বলেন, গত বছর আম কিনতে বাইরে থেকে যে পরিমাণ ব্যবসায়ী এসেছিলেন, এবার তার অর্ধেকও আসেনি। এক কেজি আমের সমপরিমাণ কিংবা তারও বেশি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টোল হিসেবে দিতে হয়।

তিনি বলেন, ২০ কেজি বা এক ক্যারেট আমে ৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা থাকলেও রামগড় উপজেলার সোনাইপুল মানিকছড়ির গাড়িটানা টোলকেন্দ্রে ১৫টাকা করে নেওয়া হয়। টোল আদায়ের কোনো রশিদও দেওয়া হয় না। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাইলে আম রেখে দেওয়া কিংবা মারধরও করা হয়। এ দিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভাও ১০ টাকা নিয়ে থাকে। আর আঞ্চলিক দলগুলোতো আছেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্ত ফল বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে ফেনী বা চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আম বা অন্যান্য ফলের প্রতিটি ট্রাকের কাছ থেকে টোল ও ট্যাক্সের নামে চাঁদা আদায় করা হয় ১০-১২ হাজার টাকা। গাড়িপ্রতি নেওয়ার কথা থাকলেও তারা ক্যারেটপ্রতি টাকা নেয়। এ ছাড়া টহল পুলিশ, মাটিরাঙ্গা, রামগড় থানা পুলিশ, ফটিকছড়ি থানা পুলিশের নামেও চাঁদা তোলা হয়।

খাগড়াছড়ি মারমা ফলদ বাগান মালিক সমিতির এক নেতা জানান, ভালো ফলন হওয়ার পরও যদি লাভের টাকা টোলের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দলকে দিতে হয় তাহলে তো কৃষক, ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারাবেন। কারা অধিক হারে টাকা নিচ্ছে, প্রশাসনসহ সবাই জানে, কিন্তু কেউ তো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর একাধিক ভেতর পার্টিকে (আঞ্চলিক দল) তো চাঁদা না দিয়ে ব্যবসার কথা চিন্তায় করা যায় না।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাজার ফান্ড প্রশাসক মংসুইপ্রু  চৌধুরী অপু বলেন, নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।