ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

শাস্তির আশা রাষ্ট্রপক্ষের, ‘বেনিফিট অব ডাউটে’ আসামিপক্ষ

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্টেন্ড | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
শাস্তির আশা রাষ্ট্রপক্ষের, ‘বেনিফিট অব ডাউটে’ আসামিপক্ষ কঠোর নিরাপত্তায় রিফাত হত্যার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা আদালতে, ছবি: বাংলানিউজ

বরগুনা: বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। মামলার ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৪ জনই আদালতে উপস্থিত হয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে মনে করছেন তারা।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরায় অসঙ্গতি ও পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। ফলে আসামিরা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ (সন্দেহ হলে নির্দোষ মনে করা) সুবিধা পেতে পারে বলে আশা করছেন।

আলোচিত হত্যা মামলাটির অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায় ঘোষণা হওয়ার কথা মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর)। ইতোমধ্যে আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত পাড়ায় তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

রিফাত হত্যা মামলায় ১৪ অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামির বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিচারিক আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবী, শাহজাহান মিয়া, নারগীস পারভীন সুরমা, গোলাম মোস্তফা কাদের প্রমুখ।

জেলা শিশু আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রিফাত হত্যা মানুষের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটেছে। এ মামলায় রিয়াজ নামের একজন সাক্ষী সৌদি আরব চলে যাওয়ায় তার সাক্ষগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আর কোনো সাক্ষীই অনুপস্থিত ছিলেন না। আমরা আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করছি। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করছি।

আসামিক্ষের আইনজীবী নারগিস পারভিন সুরমা বলেন, অন্য আর উৎসুক মানুষের মতো আমার মক্কেলও ঘটনাস্থলে শুধু উপস্থিত ছিল। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না এবং এ বিষয়ে কোনো প্রমাণও আদালতে কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শাহজাহান মিয়া এবং গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, হত্যার ঘটনায় অতিরিক্ত বেশকিছু সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। তারা বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল সাক্ষী ২০ থেকে ২৫ জন। সঙ্গে ডাক্তার ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলে ৪০ থেকে ৪৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে জড়িতদের বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব ছিল। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করায় কিছু কিছু বিষয়ে বিভ্রান্তি দেখা গেছে।

গত ১৪ অক্টোবর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। মোট ৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন। আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস দেন।

আরও পড়ুন>
** কঠোর নিরাপত্তায় রিফাত হত্যার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা আদালতে
** শুধু দোষিদেরই শাস্তি চাই: রিফাতের বাবা
** রিফাত হত্যা: ১৪ আসামির রায় ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
** ‘৬ আসামির মতো এই ১৪ জনেরও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক’

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।