ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি স্লিপার বাসে দুর্ঘটনায় আহত এক যাত্রীর পক্ষে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে দুর্ঘটনায় আহত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরানের পক্ষে ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান এ নোটিশ পাঠান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি এবং দুর্ঘটনাকবলিত সেন্টমার্টিন পরিবহনের মালিক মো. মনোয়ার হোসেনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, আমার মক্কেল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন দক্ষ ও ব্যস্ত আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি গত ১৯ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে মনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন সেন্টমার্টিন পরিবহনের ‘এফ-৩’ নং সিটে রওয়ানা করেন। পরিবহনটির রেজিস্ট্রেশন নং- ঢাকা মেট্রো-ব-১২-২৮৮১। বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট চালক সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত ও স্বেচ্ছাধীনভাবে বাসটি চালাতে থাকেন। আমার মক্কেলসহ বাসে থাকা যাত্রীরা অনেকবার তাকে সতর্ক করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বেপরোয়াভাবে বাসটি ওভারটেকিং করে চালানোর কারণে বাসটিতে প্রচুর ঝাঁকুনিসহ কম্পনের সৃষ্টি হতে থাকে।
‘বাসটির নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে রাত অনুমান ২টা ৫ মিনিটের সময় বাসটি প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বাম পাশে (বাসের) আছড়ে পড়ে বিকট শব্দ হয় এবং মুহূর্তে সমগ্র বাসটি অন্ধকারে আছন্ন হয় এবং এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আর্তচিৎকার করতে থাকেন। কেউ কেউ মোবাইলের আলোতে বাসের কিছু অংশ ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। আমার মক্কেলও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ সময় আমার মক্কেল সরকারি জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’ এ কল করে নিজেদের উদ্ধারের জন্য পুলিশ পাঠাতে অনুরোধ জানান। পরে আমার মক্কেল অন্যান্যদের সহযোগিতায় বাসের বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাসে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করেন এবং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্তদের হাসপাতালে ভর্তি করান। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আমার মক্কেল জানতে পারেন দুর্ঘটনাকবলিত স্থানটি ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বসন্তপুর মিলাবাজার সংলগ্ন এলাকা। ’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘আমার মক্কেল শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অভ্যন্তরীণ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় এবং ঢাকামুখী সৌদিয়া পরিবহনের আন্তরিকতায় বিগত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৬টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় এসে পৌঁছান এবং ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবনসহ আমার মক্কেলকে সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। কিন্তু শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় পপুলার হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে, তার পাঁজরের পাঁচটি হাড় ফেঁটে গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট ডাক্তার নানা ধরনের ওষুধ সেবনসহ দীর্ঘদিন বিছানায় পূর্ণাঙ্গ বিশ্রামের পরামর্শ দেন। আমার মক্কেলের শরীরে অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণে তার জীবন এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মিত ঘুমের ওষুধ সেবন সত্ত্বেও তিনি এখনও স্বাভাবিকভাবে রাতে ঘুমাতে পারেন না। এ অবস্থায় আমার মক্কেলের পরিবার তার শারীরিক উন্নতির জন্য এবং উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে ভারতের একটি হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়েছেন এবং ভিসা পাওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে করে আমার মক্কেলের তার আইন পেশায় ফিরে আসা নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যার ফলে তিনি শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে মনোয়ার হোসেনের মালিকাধীন বাসটি রাস্তায় চলাচলের সক্ষমতা না থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় অনুমোদনহীনভাবে সড়কে একতলা বিশিষ্ট চেসিসের অধীনে স্লিপার-দোতলা বাস সড়কে পরিচালনা করছেন। ফলে এ এধরনের অবহেলা জনিত ঘটনার ক্ষতিপূরণের দায় ভার মনোয়ার হোসেনকেই বহন করতে হবে। ’
‘অদক্ষ ড্রাইভার ও হেলপারের কারণে আইন মোতাবেক মনোয়ার হোসেন নিজের দায়সহ তার অধীনস্থ কর্মচারীর বেআইনি কাজের দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। যেহেতু আমার মক্কেল দীর্ঘদিন অর্থাৎ প্রায় ২৬ দিন যাবত আইন পেশা থেকে দূরে রয়েছেন এবং পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সময়ও অনিশ্চিত। এতে এ পর্যন্ত তার প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও চিকিৎসা বাবদ আমার মক্কেলের প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। সুতরাং আমার মক্কেলের ওই ক্ষতিপূরণসহ যাবতীয় ক্ষতিপূরণ মনোয়ার হোসেন দিতে বাধ্য। ’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, নোটিশপ্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে মনোয়ার হোসেনকে নোটিশদাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তার শারীরিক, মানসিক ও পেশাগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দিতে এবং দুর্ঘটনাকবলিত বাসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সড়কে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নোটিশ গ্রহীতাদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এর ব্যর্থতায় দেশের প্রচলিত আইন সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে এবং নোটিশ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট দায়ের করাসহ অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন বলেও নোটিশ জানানো হয়েছে।
ইএস/এমজেএফ