রাজনৈতিক ক্ষমতা আর টাকার মধ্যে লড়াই বাঁধলে বেশিরভাগ সময় রাজনীতির দাপটের জয় হয়। উদাহরণ হিসেবে মিখাইল খোদোরকভস্কির কথা অনেকেই বলবেন।
আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা, চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা-এর ক্ষেত্রে গল্পটি অন্যরকম। রাজনৈতিক বিরোধ তিনি এড়িয়ে গেছেন। নিজেকে হোমরাচোমরা হিসেবে জাহির করেননি। চেষ্টা করেন সাধারণ জীবনযাপনের। রাজনীতি নিয়ে এখন তিনি কঠোরভাবে নীরব।
এসব আলাপ তুললাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নজর ফেরাতে। সেখানে রাজনীতি বনাম অর্থের লড়াই জমে উঠছে। একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তার সম্পদের পরিমাণ ৩৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
মাস্কের সঙ্গে জ্যাক মা এবং খোদোরকভস্কির আরও মিল রয়েছে। নিজ নিজ রাষ্ট্রপতিদের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের সময় তারা তিনজনই যার যার দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনজনই যার যার রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন হয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিশেষ সুযোগ থেকে লাভও তুলেছিলেন। তিনজনই ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিলেন।
ইলন মাস্ককে হয়তো জেলে যেতে হবে না বা যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যেতে হবে না। কিন্তু ট্রাম্প সত্যিই হুমকি দিচ্ছেন, মাস্ককে তার সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হারাতে হতে পারে। তবে তিনটি গল্প এক হবে না মনে হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সম্ভবত সবচেয়ে বিকশিত গণতন্ত্র বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতায় সহজে হস্তক্ষেপ করা যায় না। রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তোলা হয়।
পশ্চিমা প্রচারণা আছে, পুতিন এবং শি জিনপিং আজীবন রাষ্ট্রপতি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির উপর কঠোর দুই মেয়াদের সীমা রয়েছে। ট্রাম্প ২০২৯ সালের পরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন না। মাস্কের মাথায় বিষয়টি আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি লিখেছেনও, ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হিসাবে আর সাড়ে ৩ বছর বাকি আছে। কিন্তু মাস্ক নিজে ৪০ বছরেরও বেশি সময় বাঁচার আশা রাখেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। খোদোরকভস্কির সম্পদ ছিল প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জটিলতার সময় জ্যাক মা’র সম্পদ ছিল প্রায় ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ভবিষ্যৎমুখী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে মাস্ক তার সম্পদ গড়েছেন। সেসবের মধ্যে আছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, মহাকাশ ও উপগ্রহ সংস্থা এবং এক্স-এর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তরুণদের আইকন হিসেবে তার সামাজিক অবস্থান আছে। তাকে সহজে ভোলা যাবে না। অন্যদিকে খোদোরকভস্কি জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ছিলেন। জ্যাক মা ই-কমার্স এবং আর্থিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর মতো প্ল্যাটফর্ম চালাতেন।
মাস্কের জেলে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তাকে দেশও ছাড়তে হবে না হয়ত। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধে তার ক্ষতি হবে না, এমন নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে, ট্রাম্পের নির্বাহী কর্তৃত্ব বিশাল। তিনি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করতে পারেন, আইন প্রণয়ন করতে পারেন এবং বিচার বিভাগের মতো ফেডারেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশনা দিতে পারেন। শুল্ক থেকে শুরু করে অভিবাসন, ভর্তুকি পর্যন্ত নীতি গঠনে ট্রাম্পের ক্ষমতা তাকে মার্কিন সরকারের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্প ইতিমধ্যেই মাস্কের ফেডারেল চুক্তি বাতিল এবং বিদ্যুৎচালিত বাহনে ভর্তুকি বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। নিজের বিশাল সমর্থকগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে তিনি মাস্কের বিরুদ্ধে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারেন। জনপ্রিয়তার এমন ক্ষতি মাস্কের ব্যবসায়িক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
ট্রাম্পের এটি দ্বিতীয় ও শেষ মেয়াদ। ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে মাস্ক কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না। বিষয়টি এই ধনকুবেরের জন্য শাপে বর হতে পারে। কারণ ওই যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদ আর মাত্র সাড়ে তিন বছর। ২০২৯ সাল পর্যন্তই ট্রাম্প হয়ত আরও শক্তিশালী হবেন। এই সময়টুকুতেই তিনি মাস্ক এবং তার ব্যবসায়িক স্বার্থের যথেষ্ট কিন্তু সামান্য ক্ষতি করতে পারবেন। মাস্ক যদি এই কয়দিন মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে পারেন, তাহলে তার পরে তার ক্ষমতা আর প্রভাব ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ইউরেশিয়া টাইমসে প্রকাশিত সাংবাদিক সুমিত আহলেওয়াতের কলাম থেকে অনুবাদ করেছেন মাহমুদুল হাসান ধ্রুব
এমএম