ফিফা বিশ্বকাপ ২০৩৪ আয়োজন করতে চলেছে সৌদি আরব। এই মেগা ইভেন্ট ঘিরে দেশটিতে চলছে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম।
খবরটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা বিশ্বে শুরু হয় উত্তপ্ত বিতর্ক।
'হিন্দুস্তান টাইমস' এর খবর অনুযায়ী, সৌদি কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। ইসলামিক আইন অনুযায়ী মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় মদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। সৌদি আরব নিজেকে “দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবক” বলে দাবি করে — মক্কা ও মদিনা যেখানে অবস্থিত।
বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সূত্র আরব নিউজ-কে জানিয়েছেন, “এই ধরনের দাবিগুলোর পেছনে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা নেই এবং তা সৌদি আরবের বর্তমান নীতি বা বিধিনিষেধকে প্রতিফলিত করে না। ”
উপসাগরীয় প্রতিবেশী দেশ কাতার ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল। সে সময় স্টেডিয়ামে মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়নি, তবে নির্দিষ্ট ফ্যান জোনে মদ বিক্রি করা হয়েছিল।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার বিন সুলতান আল সৌদ জানিয়েছেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে মদ পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, “আমাদের আবহাওয়ার মতোই, সৌদি আরব একটি ‘ড্রাই কান্ট্রি’ (মদের ক্ষেত্রে শুষ্ক দেশ)। প্রতিটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে, এবং আমরা আমাদের সীমার ভেতরে থেকে অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে অন্য কাউকে খুশি করতে গিয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতি বদলাতে চাই না। ”
বর্তমানে উপসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র সৌদি আরব ও কুয়েতেই মদের বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে গত বছর এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপে রিয়াদে একটি বিশেষ দোকান খোলা হয় যেখানে শুধু অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে কেবল কূটনৈতিক প্যাকে বা কালোবাজারে মদ পাওয়া যেত।
সৌদি যুবরাজ ও দেশের ‘ডি ফ্যাক্টো’ শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ২০১৭ সাল থেকে দেশটির সামাজিক রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখছেন। তার ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে নারীদের গাড়ি চালানো, সিনেমা হল খোলা, মডেলদের র্যাম্পে হাঁটার অনুমতি, এমনকি বালুকাময় মরুভূমিতে মিউজিক ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের মতো পরিবর্তন এসেছে।
নারীদের এককভাবে বিদেশে ভ্রমণের অধিকার, জন্ম ও বিবাহ নিবন্ধনের অধিকার, এবং পাবলিক প্লেসে নারী-পুরুষের মেলামেশার বিধিনিষেধ শিথিল করাও এই সংস্কারের অংশ।
বিশ্বকাপ আয়োজনকে কেন্দ্র করে সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আরও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সীমারেখা অতিক্রম না করেই এই রূপান্তর কীভাবে সম্ভব হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
এমএইচএম