ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

পাঁচ মাসেও উদঘাটন হয়নি জবি শিক্ষার্থী আকবর হত্যার রহস্য

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২
পাঁচ মাসেও উদঘাটন হয়নি জবি শিক্ষার্থী আকবর হত্যার রহস্য

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু উদঘাটন হয়নি।

আকবরের পরিবার জানায়, বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের খুলশী থানায় থাকলেও দীর্ঘ সময় পরেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না পেয়ে তাদের পরিবার চায় মামলাটি পিআইবি বা সিআইডির অধীনে দেওয়া হোক।

এজন্য তাদের পরিবার থেকে একটি লিখিত আবেদন করলেও মামলাটি এখনও আগের অবস্থাতেই রয়েছে। এছাড়া তার পরিবার থেকে মামলায় উল্লেখিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এখন অব্দি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে তার পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করে।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আকবর হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও আকবরের বড় বোন লাবণী খানম আঁখি।
 
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, দেশব্যাপী আলোচিত গত ২৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪র্থ বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী মো. আকবর হুসাইন খান রাব্বি পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময়ে ফোনে যোগাযোগ করলে আশপাশে রয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে যখন আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন একটু পর বাসায় ফিরবেন বলে তার বড় বোনকে জানান। এরপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায় আকবরকে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে নিচে কে বা কারা ফেলেছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় তার কোমরের বাম পাশে ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেওয়ায় তার মস্তিষ্ক অনেকাংশে থেঁতলে যায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে টানা পাঁচ দিন চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে আকবরের মৃত্যু হয়।

দীর্ঘ পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। পুলিশ এখনও সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কে বা কারা গত ২৭ আগস্ট রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করেছে তা এখনও এক রহস্য রয়ে গেছে। আকবরের মোবাইল ফোনটি ঘটনার এক দুদিনের মধ্যেই থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে হার্ড রিসেট দেওয়া হয়, ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখনও সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে জানায়।  

চমেক হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশের তদন্ত ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে স্পষ্ট যে, প্রাথমিক তদন্তে চট্টগ্রাম খুলসী থানা পুলিশ এটিকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা বলে নিশ্চিত করে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব। তারা সবাই শঙ্কা প্রকাশ করে, তদন্তে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এর অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এজন্য তারা বাংলাদেশ পুলিশের দায়সারা ভাবকে প্রধান কারণ মনে করছেন। সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবার ও সহপাঠীরা নিজেদের দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তারা অনতিবিলম্বে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

তারা আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক মেধা, শ্রম দিয়ে এ পর্যায়ে আসে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এতগুলো বছর পড়াশোনা, কত স্বপ্ন, কত আশা। আকবরের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঠিক ফাইনাল পরীক্ষার আগে আগে তার এ রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড। এটা মেনে নেওয়া তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব সবার জন্য কষ্টকর।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজ জানান, মামলার তদন্ত চলছে, তার ল্যাপটপ সিআইডির ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২২
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।