চট্টগ্রাম: ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন)। সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হবে লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত।
জানা গেছে, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৭১ হাজার ৫২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৮৩৯ এবং ছাত্রী ৩৯ হাজার ৬৮৪ জন। শুধু মহানগরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৮৪। কক্সবাজার জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৫ জন, যার মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৭২২ ও ছাত্রী ৭ হাজার ২৮৪ জন। রাঙামাটিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫৪ জন, যার মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৪১৬ এবং ছাত্রী ৩ হাজার ১৩৮ জন। খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ৮২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন, ছাত্র ৩ হাজার ৩০৬ ও ছাত্রী ৩ হাজার ৭৭৬ জন। বান্দরবানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭১ জন, যার মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ৮৫৬ এবং ছাত্রী ২ হাজার ১৫ জন। মোট ১১৫টি কেন্দ্রে এসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন।
শিক্ষাবোর্ড জানিয়েছে, পরীক্ষা সুষ্ঠু, কেন্দ্র নকলমুক্ত রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের গুজব প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গুজব থেকে পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে সব কোচিং সেন্টার ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
পরীক্ষার্থীদের ১০টি নির্দেশনা:
এ বছর পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। এর মধ্যে রয়েছে-পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা, ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য লেখা ও বৃত্ত ভরাট, উত্তরপত্র ভাঁজ না করা, শুধু সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা এবং বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি না থাকা, পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না, তত্ত্বীয়, এমসিকিউ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে পাস করতে হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার্থী শুধু প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে আসনবিন্যাস করা হয়েছে, অর্থাৎ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা নেওয়া হবে না। প্রতিটি অংশের উপস্থিতি পত্রে পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
পরীক্ষাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনে মাইক ব্যবহার করে সচেতনতা তৈরি, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে নকল প্রতিরোধ পোস্টার টাঙ্গানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে শুধু এনালগ কাঁটাযুক্ত ঘড়ি ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। এ ছাড়া বর্ষাকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসকে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা:
চট্টগ্রাম নগরের সকল পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পরীক্ষা চলাকালীন সময়জুড়ে এ আদেশ কার্যকর থাকবে। নকল প্রতিরোধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৮-এর ২৯, ৩০ ও ৩৩ ধারার ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরীক্ষার শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকে শেষ হওয়ার পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকায় এই আদেশ কার্যকর থাকবে।
এই আদেশের আওতায় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য, লাঠিসোটা বহন, যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল, উচ্চস্বরে চিৎকার বা শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রের ব্যবহার, অননুমোদিত ও বহিরাগত ব্যক্তিদের কেন্দ্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সিএমপি জানিয়েছে, এই নির্দেশ প্রতিটি পরীক্ষার দিন কার্যকর থাকবে এবং কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে পরীক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন করতে আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এবার ১১৫টি কেন্দ্রে ৩০৭টি কলেজের ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মোট ৪০টি পরিদর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। তারমধ্যে সাধারণ পরিদর্শক দল গঠন করা হয়েছে ৩০টি ও বিশেষ পরিদর্শক দল ১০টি।
বিই/টিসি