চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা এবং রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড মার্চ করবে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’।
শুক্রবার (২৭ জুন) ঢাকা থেকে রোডমার্চ শুরু হবে।
বুধবার (২৫ জুন) নগরের চেরাগি পাহাড়ের বৈঠকখানা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুচ্ছাফা ভূঁইয়া বলেন, সরকারের অপরিণামদর্শী দেশবিরোধী সিদ্ধান্তের কারণে এ রোডমার্চ করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। ২০২৩ সালে বন্দরের নিজস্ব অর্থে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল সৌদি আরবের একটি কোম্পানির সঙ্গে লিজ চুক্তি করে। তখনও বামপন্থীরা প্রতিবাদ করেছিল। এরপর ২০২৪ সালে এনসিটি আরব আমিরাতের একটি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার লিজ চুক্তির আলোচনা চালয়ে যাচ্ছিলো বিগত সরকার। কিন্তু ২৪ এর জুন ও জুলাইয়ের গণআন্দোলনের কারণে সেই চুক্তি আওয়ামী লীগ সরকার শেষ করে যেতে পারেনি। আমরা তখনও বাম গণতান্তিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা থেকে প্রতিবাদ করেছি।
স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালে যা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনোয়োগের চমকপ্রদ কথা বলে আওয়ামী লীগের সেই দেশবিরোধী চুক্তি বাস্তবায়ন করার নতুনভাবে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বন্দর হিসেবে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে নতুন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই এবং এটি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের একটা অংশ বলেও আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, রাখাইনে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। রাখাইনে করিডোর বা ত্রাণ চ্যানেলের মাধ্যমে মিয়ানমারের জান্তা সাথে বাংলাদেশকে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার একটি গভীর সাম্রাজ্যবাদী ভূ-রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে আমরা মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, এ সরকার তো কোনো স্থায়ী সরকার না। জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো বিষয়ে অগ্রসর হতে হলে এ ধরনের অস্থায়ী সরকার কোনো মৌলিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। জনগণের কোনো অংশের সাথে আলোচনা না করে হঠাৎ করে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর কোথায় কে আছে, তাদের ডেকে আনেন তারা আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ঠিক করে দেবে। কথাটা শুনতে যত সহজ, ভেতরের বিষয়টা তত সহজ না।
ভূ-রাজনীতি নানা ধরনের জটিলতায় পড়ে গেছে। কখন বাংলাদেশ কোনো জটিলতায় পড়ে যায়, কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে যায় কী না এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া এবং রাখাইনের কথিত মানবিক করিডোর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জনগণের প্রতিনিধিদের। জনগণ যাদের ম্যান্ডেট দেবে তারাই জনগণের হয়ে এ ধরনের কাজ করা উচিত। আমরা দেশের উন্নতি চাই। আমাদের দেশবাসী ভালো থাকুক, আমরা চাই। কিন্তু বিদেশি কোনো চক্রান্তের গহ্বরে আমাদের জাতীয় জীবন পড়ে যায় কি না এটা আমাদের দেখতে হবে। বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছে, কিন্তু সে দেশের কোনো লাভ হয়নি। শেষ বিচারে ক্ষতিই করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দীন কবির আবিদ, বাসদের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়, গণমুক্তি ইউনিয়নের নেতা রাজা মিয়া ও সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা শাহিন মঞ্জুর উপস্থিত ছিলেন।
এআর/পিডি/টিসি